চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আনা ভারতীয় রুপিগুলো জাল বলে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির মেশিনে ছাপানো রুপিগুলো দেখতে একেবারে নিখুঁত হওয়ায় সেগুলো জাল কিনা তা নিশ্চিত করতে সময় লেগেছে আট মাস। আগামী রোববার সিআইডি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে।
আলামত হিসেবে জব্দ করা প্রতিটি পাঁচশ রুপি মূল্যমানের ৫৪ হাজার ৩৫৩টি নোট জাল প্রমাণের পর বৃহস্পতিবার (০২ জুন) ফের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক লিটন দেওয়ান।
লিটন দেওয়ান বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের পরিদর্শক ও জাল নোট বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আবু সাঈদের মতামত প্রতিবেদন আমরা বুধবার হাতে পেয়েছি। রোববার ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তবে মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে আরও সময় লাগবে।
গৃহস্থালী পণ্য ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা একটি কনটেইনারের চারটি কার্টনে ভারতীয় রুপি পাওয়ায় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সেগুলো আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। পরদিন গণনায় সেখানে ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ রুপি পাওয়া যায়। ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর বন্দর থানায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিধান কুমার সরকার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে ছয়জনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- দুবাই থেকে আসা চালান খালাসের দায়িত্বে থাকা সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাশ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান শামীমুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদউল্লাহ, ব্যবসায়িক অংশীদার আহমদ উল্লাহ, কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের টি বয় মোহাম্মদ ছাবের, চালানটির মালিক শাহেদুজ্জামান ও তার ছোট ভাই তৌহিদুল আলম।
এদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদউল্লাহ যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. মোবারক হোসেন ওরফে মোবারক আলীর ছেলে।
আসামিদের মধ্যে শাহেদুজ্জামান ছাড়া বাকি সবাই শুরুতেই গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে শাহেদুজ্জামানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি।
শুরুতে বন্দর থানা মামলাটির তদন্ত শুরু করেছিল। অক্টোবরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে। সিআইডি রুপিগুলো জাল কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য সেগুলো ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পাঠায়।
ফরেনসিক ল্যাব থেকে পাঠানো মতামত প্রতিবেদনে নোটগুলো জাল হিসেবে অভিহিত করে মোহাম্মদ আবু সাঈদ উল্লেখ করেছেন, ৫০০ রুপির মূল্যমানের নোটগুলো তৈরিতে অপটিক্যাল ভেরিয়েবল ইনক ব্যবহার করা হয়নি। নোটের উপর জলছাপ, নিরাপত্তা সূতা নিম্নমানের যে কারণে মহাত্মা গান্ধীর মুখমণ্ডল লেপ্টে গেছে। এক্স-রে রিপোর্টেও ফাইবার দৃশ্যমান হয়েছে ত্রুটিপূর্ণভাবে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সিলে কালির ব্যবহার ভাল হয়নি। ফলে প্রত্যেকটি সিল অষ্পষ্ট।
সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক লিটন দেওয়ান বলেন, নোটগুলো যে মেশিনে তৈরি করা হয়েছে সেটা খুব উন্নত প্রযুক্তির। সেজন্য সাধারণ চোখে সেগুলো আসল রুপি বলেই মনে হয়েছে।
সূত্রমতে, প্রতিটি নোটের উপর জাল হিসেবে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব থেকে সিল দেয়া হয়েছে। এরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার পর তারাও প্রতিটি নোটের উপর আলাদা সিল দিয়েছে। কাস্টমস ও সিআইডি কর্মকর্তারা নোটগুলো গুণে নেন।