উড়োজাহাজ ক্রয়ে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেডের এমডিসহ চার পরিচালককে আগামী মার্চ মাসে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তারা হলেন তৎকালীন কর্মকর্তাদের মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারের এমডি ক্যাপ্টেন (অব.) তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী, পরিচালক মো. মাহতাবুর রহমান, শাহিনুর আলম ও খন্দকার তাছলিমা চৌধুরী বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান পাঁচ পরিচালকের জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও তারা এতে হাজির হননি। বিদেশে থাকায় এদের কয়েকজন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। দুদক সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
বাকি ১৩ জন কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। এরা হলেন উনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালক মো. মাজহুরুল হক, জাকির হোসেন চৌধুরী, আহফাজ মিঞা, মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, খন্দকার মামুন আলী, মো. হাজী সানোয়ার মিয়া, মো. আজিজুর রহমান, তরুণ মিঞা রাজা মিঞা, খন্দকার ফেরদৌসি বেগম আলী, সাঈদ চৌধুরী, মো. খশরুজ্জামান, আব্দুল কুদ্দুস কাজল ও প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজার (এজিএম) তৌফিক আহমেদ।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. মাহতাবুর রহমান বর্তমানে দুবাই রয়েছেন। তিনি সেখানে ব্যবসা করেন। আগামী মার্চে দেশে ফিরে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সহায়তা করবেন বলে তিনি কমিশনকে জানিয়েছেন।
আরেক পরিচালক শাহিনুর আলম ওমরা হজ পালনের জন্য সৌদি গিয়েছেন। দেশে ফিরে তিনিও দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সহায়তরা করবেন বলে কমিশনকে জানিয়েছেন।
আর পরিচালক খন্দকার তাছলিমা চৌধুরী চিকিৎসার জন্য বিদেশ রয়েছেন। তিনিও মার্চে দেশে ফিরে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সহায়তা করবেন বলে কমিশনকে জানিয়েছেন।
এর আগে ইউনাইটেড এয়ারের এমডি ক্যাপ্টেন (অব.) তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বিদেশে থাকায় কমিশনের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়া ওই সব কর্মকর্তাদের স্থায়ী ঠিকানায় ইতোমধ্যেই তলবের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে তলবের চিঠি যথাসময়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছায়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক দর থেকে বেশী মূল্যে উড়োজাহাজ ক্রয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে ক্যাপ্টেন (অব.) তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও এমডির দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছেন আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশী দামে। উড়োজাহাজ কেনার নামে অনিয়মের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়।
নিয়ম অনুসারে, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়াই শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের একক সিদ্ধান্তে উড়োজাহাজ কিনেছে।
বিমান সংস্থাটি ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছে আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশী দামে। এ ছাড়া একই সময় কেনা একই মডেলের উড়োজাহাজ তারা কিনেছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। যেমন এমডি-৮৩ মডেলের তিন জাহাজের মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৭৬ লাখ ডলার, ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৮০ ডলার। অন্য তিনটি মডেলের ক্ষেত্রেও একই রকম করা হয়েছে।
নীতিমালা প্রণয়ন না হলেও কোম্পানির প্রয়োজনে নয়টি উড়োজাহাজ কেনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে এমডি-৮৩ মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ। এতে ব্যয় হয় দুই কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮০ ডলার। দুইটি এয়ারবাস কেনা হয় দুই কোটি ৬২ লাখ ৫৫ হাজার ডলারে। দুটি এটিআর উড়োজাহাজ কেনা হয় এক কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে এবং ড্যাশ-৮ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ কেনা হয় এক কোটি এক লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ ডলারে। এ সব উড়োজাহাজ জ্বালানী সাশ্রয়ী নয়।
দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।
-ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫)