পাচার হওয়া ইমরান এখন মানসিক ভারসাম্যহীন

Boy20160612033640কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ২০১৪ সালে নৌকা যোগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান ইমরান (ছদ্মনাম)। এরপর শুরু হয় শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। নির্যাতনে ইমরান এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। গত ৩ জুন তাকে দেশে ফেরত পাঠনো হয়।

গত ২৮ মে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কুয়ালালামপুর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে পুত্রজায়ার আশ্রয় কেন্দ্রে দেখা হয় ইমরানের। মানসিক ভারসাম্যহীন ইমরান বলে, আমি দেশে যেতে চাই, সেখানে আমার খালাত ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। খালাত ভাইয়ের নাম পরিচয় জানতে চাইলে বলে, খালাত ভাইয়ের বাড়ী ‘ব্রাজিল’ ও তার নাম ‘পেলে’।

ইমরানের বর্তমান বয়স ১৭ বছর। মানবপাচারকারীরা তাকে একটি কুচক্রি মহলের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে সেই চক্রটি তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করতে চায়। এছাড়া মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে ইমরান।

এ বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশি অভিবাসী সংস্থা মাইগ্রেন্ট ৮৮’র নির্বাহী সম্পাদক আশিক রহমান জানান, পাচারকারীরা বালকটিকে বঙ্গোপসাগরের আন্দামানের মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডের কাছে ২০১৪ সালের নভেম্বরে দীর্ঘ ভ্রমণে তাকে নির্যাতন করা হয়। পরে থাইল্যাণ্ডের জঙ্গলে ফেলে রেখে যায় পাচারকারীরা।

তিনি আরো বলেন, অসুস্থ ও অনাহারের থাকা অবস্থায় তাকে (ইমরান) আধুনিক দাস হিসেবে কেনা-বেচা করা হয়েছে। পাচারকারীরা তাকে এক মাস শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেছে। মালয়েশিয়ার পিনাংয়ের একটি চক্র ক্রয় করেছিল। পরে তাকে যৌন কারখানায় রাখা হয়। পাচারকারীরা তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। ভাগ্যক্রমে সেখান থেকে বেঁচে যায় সে।

কুয়ালালামপুর ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা তিনাগানিতা তাকে সহায়তা করার অনুরোধ করেন। পরে মাইগ্রেন্ট ৮৮ তাকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় এবং গত ৪ জুন তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।

ইমরানের মা ও বড় বোন জানান, বর্তমানে সে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। দুই বছর আগে পরিবারের কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যায় সে। এখন সে আমাদের চিনতে পারছে না। আমরা যদি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই তাহলে সে আমাদের প্রশ্ন করে আমরা কারা? নিজে নিজেই কথা বলে।

তারা জানান, অপহরণের ১৮ দিন পর তারা জানতে পারের স্থানীয় পাচারকারীরা ইমরানকে পাচার করেছে। বন্দিশালা থেকে উদ্ধার করতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমি বিক্রি করে দেওয়া হয় পাচারকারীদের। তার পরও কোনো লাভ হয়নি। এখন ইমরানের চিকিৎসার খরচ যোগাতেই পরিবার উদ্বিগ্ন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.