এভিয়েশন নিউজ: বিমানের যাত্রী পরিবহন এবং আয় দুটোই আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে যাত্রী পরিবহন ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে এই হাতের আয়ও, ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বিমানের সংশ্লিষ্ট হিসাব শাখা বলছে, আগের অর্থ বছরে যখন যাত্রী পরিবহন থেকে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ক্যারিয়ার ২ হাজার ২৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আয় করেছে সেখানে চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
অথচ এই আট মাসে বিমানের যাত্রী পরিবহন থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থ বছরের শুরুতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭১ দশমিক ১২ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে বিমান।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে ইংলিশ ব্যবস্থাপক জন কেভিন স্টিল দুই দিনেও কোনো উত্তর দেননি। তবে বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত দেশে রাজনৈতিক অস্থিশীলতার কারণে বিদেশ থেকে দেশে যাত্রী আসার হার অনেক কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বিমানের ব্যবসার ওপরে।
একই সঙ্গে প্রবাসে কর্মী যাওয়া আসার হার কমে যাওয়াকে দায় করেন তারা। বিমানের বিপনন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্য প্রাচ্যে বিমানের যাত্রী পরিবহন একেবারেই পড়ে গেছে। আর এ কারণে তাদের আয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১১-১২ অর্থ বছরেও বিমান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ১৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। গত অর্থ বছরে যা নেমে আসে ১৫ লাখে। এই অর্থ বছরে যাত্রী পরিবহনের এই অংক ১৫ লাখ না হতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অর্থ বছরের আট মাসে বিমানের যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজারের কিছু বেশী। অথচ জুলাই ২০১২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ পর্যন্ত আট মাসে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বিমানের এভাবে যাত্রী ও আয় কমে যাওয়া বিষয়ে দুঃশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বিমানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিমান বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা লাভ না করতে পারলে তখন বেকার হয়ে যাবেন।
বিমানের হিসেব থেকে দেখা যায় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে বিমান ১ লাখ ১ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। অথচ আগের বছরের একই মাসে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার। ২০১৩ সালের ওই মাসেই বিমানের আয় ছিল ১৬২ কোটি ৩ লাখ টাকা। অথচ এক বছর আগের এই অংকও ছিল ২৪৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতি হয়েছে পরের কয়েক মাসেও। তবে কেবল ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসেই বিমান তাদের আয়ের লক্ষ্য অতিক্রম করতে পেরেছে। অক্টোবর মাসে তারা আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিল ৩৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অথচ প্রকৃতপক্ষে তাদের আয় উঠে ৩৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। কিন্তু এরপরেও ২০১২ সালের অক্টোবর মাসের হিসেব টপকাতে পারেনি তারা। আগের বছর এই মাসে বিমান আয় করেছিল ৩৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
গত আট মাসের মধ্যে কেবল ফেব্র“য়ারিতে এসে বিমানের আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভালো হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারিতে তাদের আয় ছিল ১৮২ কোটি টাকা। আর ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারিতে এই অংক দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
তবে এই আট মাসের মধ্যে বিমান সবচেয়ে বাজে সময় কাটিয়েছে জানুয়ারি মাসে। ২০১৪ সালের এই মাসে তারা ১ লাখ ১৮ হাজার যাত্রী পেয়েছে। আর আয় করেছে ১৭৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যেখানে তাদের আয়ের লক্ষ্যে মাত্রা ছিল ৩৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বিমানের বিপন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, ২০১৩ সালের শেষ দিকটা তাদের অনেক খারাপ কেটেছে। অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ নেওয়ার পরেও যাত্রী ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এর আগে দীর্ঘ্যদিন ধরে লোকসানে থাকা বিমান জরুরী অবস্থার দুই বছরে ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে খানিকটা লাভ করে। পরের বছর আবার লোকসানে ফিরে আসে তারা। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে তাদের লোকসান হয় ৮০ কোটি টাকা।
পরের দুই বছর লোকসান হয় যথাক্রমে ১৭৫ কোটি ও ৬০০ কোটি। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে লোকসান খানিকটা কমে আসে ২০০ কোটিতে। বিমানের কর্মীরা বলছেন, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে আয় কমে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাতে করে বিমানের লোকসান হয়তো বাড়বে না। কারণ অনেক অপ্রয়োজনী খরচ ইতিমধ্যে তারা কমিয়ে আনতে পেরেছেন।