ভিড়ে বেসামাল প্রবাসী কল্যাণ কর্মকর্তারা

Vogantiনোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এসেছেন হাবিবুর রহমান (৩২)। প্রায় অর্ধকিলোমিটার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। জানালেন, ‘২০ হাজার টাকায় সৌদি আরব, আর কোনো খরচ নাই’ তাই এখানে আসা। তার মতো ২০ হাজারের বেশি সৌদি গমনেচ্ছু বৃহস্পতিবার ভিড় জমিয়েছেন ইস্কাটন গার্ডেনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে। সবার টার্গেট সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা। যদিও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, এ নিয়ে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। এটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রত্যেক ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রে বসেই অনলাইনে নাম নিবন্ধন করা যাবে। এ ছাড়া জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমেও নাম রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিরা অফিস চলাকালীন সময়ে সৌদি আরবসহ বিশ্বের যেকোনো দেশে যাওয়ার জন্য ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)-এর অধীন সব জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। বিএমইটির ওয়েবসাইট (www.bmet.gov.bd)-এর মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

রেজিস্ট্রেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই।’ এরপরও প্রবাসীকল্যাণ ভবনে ভিড় কমছে না। বিএমইটির কর্মকর্তা জহিরুল ইমলাম জানান, সরকারিভাবে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৌদি গমনেচ্ছু ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। গত তিন দিন ধরে ফরম বিতরণ ও জমা নেয়ার কাজ চলছে। ঢাকায় প্রায় ৫০ হাজার ফরম বিতরণ ও ৪০ হাজারের মতো জমা পড়েছে। পরে লটারির মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। সারা দেশে মোট কত নাম নিবন্ধন হয়েছে- জানতে চাইলে ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা জানান, এখনও তারা সে হিসাব করেননি। রেজিস্ট্রেশন চলছে। পরে হিসাব করবেন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শহীদুল আলম মজুমদার জানান, প্রথম দিকে শুধু নারী গৃহকর্মী নেয়া হবে। পুরুষদের পরে পাঠানো হবে। তাই নিবন্ধন নিয়ে পাগলের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ার কিছু নেই। আর আগে নিবন্ধন করলে আগে যাওয়া যাবে এ বিষয়টিও সঠিক নয়।
প্রবাসীকল্যাণ অফিস সূত্র জানায়, আগ্রহীরা নির্ধারিত ফরম সংগ্রহের পর ১৫০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট এবং অন্য কাগজপত্রসহ ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার পর একটি সিরিয়াল নম্বর দেয়া হচ্ছে। সার্ভারে ডাটা এন্ট্রি হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন সংশ্লিষ্ট ফরম জমাদানকারী ব্যক্তি। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী আগ্রহী পুরুষ কর্মী এবং গৃহকর্মী হিসেবে ২৫ থেকে ৪৫ বছরের নারীরা তাদের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, জন্মনিবন্ধন অথবা জাতীয়তা সনদপত্রের ফটোকপি যেকোনো একটি সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষাগত ও কাজের অভিজ্ঞতা সনদের (যদি থাকে) ফটোকপি আনতে হবে। নিবন্ধনের আবেদনপত্রের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে ১৫০ টাকার একটি পে-অর্ডার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর জমা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে যারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তারাও সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তাদের নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে না। সৌদি আরব যাওয়ার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সৌদি আরবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার কর্মী পাঠানো হবে। একজন কর্মীর সৌদি আরব যেতে খরচ পড়বে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে প্রবাসীকল্যাণ ভবনের সামনে ছিল হাজারো মানুষের ঢল। চায়ের দোকানে, মাটিতে, সিঁড়িতে বসে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে যেভাবে পারছেন নিবন্ধন ফরম পূরণ করছেন। আবার কেউ খোঁজ নিয়েছেন কি করতে হবে, কি কাগজ জমা দিতে হবে। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও কারোই যেন ক্লান্তির ছাপ নেই। এরই মধ্যে কিছু যুবককে দেখা গেছে ২০ থেকে ৫০ টাকার বিনিময়ে অন্যের ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে দিচ্ছেন। পুরুষ এমনকি মহিলারাও দেয়াল টপকে প্রবেশ করছেন প্রবাসীকল্যাণ ভবনে। দেয়ালের ওপর কাঁটা তারের বেড়া দেয়া। তার ওপর দিয়ে গাছ বেয়েও ভবনের ভেতরে প্রবেশ করছেন অনেকে। তারা সবাই মনে করছেন, যেন নাম নিবন্ধন করতে পারলেই সৌদি আরব যাওয়া যাবে। উপস্থিত লোকজন জানান, তাদের কেউ সেই ফজরের আজানের সময় এসে গেটে দাঁড়িয়েছেন।
এদিকে আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায় সৌদি গমনেচ্ছুদের নাম নিবন্ধনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এর ফলে সৌদি গমনেচ্ছুদের ভিড় সামাল দিতে বেসামাল হয়ে পড়েন প্যাভিলিয়নের লোকজন। ভিড়ের চাপে প্যাভিলিয়ন ভেঙে পড়ে। ওই দিন থেকেই নিবন্ধন ফরম জমা দিতে চাপ বাড়ে ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনের নিচে।
সৌদি সরকারের সঙ্গে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী আপাতত শুধু ৮০০ রিয়াল (প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা) বেতনে গৃহকর্মী (নারী) নেবে সৌদি আরব। এর পর ধীরে ধীরে মালী ও দারোয়ানসহ অন্য ১১টি গৃহস্থালি কাজে কর্মী নেবে তারা। এ চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয় বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। দেশটিতে ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বৈধ-অবৈধ শ্রমিক কর্মরত আছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। দীর্ঘ চেষ্টা-তদবিরের পর গত ১ ফেব্র“য়ারি সৌদি সরকার বাংলাদেশের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
কিশোরগঞ্জ ব্যুরো জানায়, সৌদি আরব যেতে নাম নিবন্ধনের জন্য বৃহস্পতিবাার হুমড়ি খেয়ে পড়েন কিশোরগঞ্জের বেকার যুবক-যুবতীরা। নিবন্ধন ফি বাবদ পে-অর্ডার সংগ্রহে সোনালী ব্যাংক এবং নিবন্ধন ফরম জমা দিতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান তারা। পে-অর্ডার প্রদান ও ফরম জমা দেয়ার নজিরবিহীন এ ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ব্যাংক ও কর্মসংস্থান অফিস কর্তৃপক্ষকে। জেলার ১৩টি উপজেলার যুবক-যুবতীদের সোনালী ব্যাংকের একই শাখা থেকে পে-অর্ডার সংগ্রহের কারণে ব্যাংক আঙ্গিনায় বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন ভিড়ের সৃষ্টি হয়।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.