আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

val-1val-5‘দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়াঃ’- ভালোবাসার মানুষটির প্রতি প্রেমের এই অনুরাগ চণ্ডীদাসের। প্রিয়ার অর্ধ তিলে তিনি খুঁজে পেয়েছেন প্রবল আকর্ষণ। এটাকে প্রেম বলি আর ভালোবাসা, যা-ই, তা হƒদয়ঘটিত। মনের মানুষের কাছে হƒদয়ের কথা বলার ব্যাকুলতা জš§-জš§ান্তরের। নির্দিষ্ট কোনো দিন বা ক্ষণের জন্য অপেক্ষার নয় ভালোবাসার অনুভূতি। ঝর্ণাধারার মতোই প্রবাহমান তার ধারা। প্রেমিককূলে যুগ যুগ ধরে তাই চলে আসছে। তবে হালে ভালোবাসা জানান দিতে পৃথিবীজুড়ে ঘটা করে একটি দিবস পালন করা হচ্ছে। সেই দিনটিই আজ। আজ ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে’। প্রিয়ার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ারই দিন আজ।

øেহ, প্রীতি-বন্ধন, প্রেম আর কৃতজ্ঞতা-শ্রদ্ধায় গড়া আমাদের জীবন। এগুলোর গ্রন্থিত রূপটির নামÑ‘ভালবাসা’। পিতামাতার প্রতি সন্তানের, সন্তানের প্রতি পিতামাতার, ভাইবোনের পারস্পরিক, স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির কিংবা সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অথবা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রিয়-প্রিয়ার; এই যে হরেক রকমের বিনিসূতোর বন্ধন সেটার শাব্দিক প্রকাশের নাম ভালোবাসা! দিনটি সব বয়সের সবার হলেও প্রধানত তারুণ্যেরই জয়জয়কার। ভালোবাসা দিবস প্রবর্তনের গোড়া থেকেই বিশ্বব্যাপী দিনটিতে তরুণ প্রজম্মকেই বেশি মাতামাতি করতে দেখা যায়। তাইতো চিরজনমের তরে বাহু ডোরে বাধা পড়া কিংবা হƒদয়বেদীতে যার জন্য থরে থরে সাজানো প্রেমের অর্ঘ্য; মুগ্ধতা আর ভালোবাসার চিরকালের নায়িকা যিনি, সেই বনলতা সেন অথবা মোনালিসা কিংবা মানসীকে নিয়ে বসন্তের উতলা হাওয়ায় আজ কেউ কেউ উড়িয়ে দেবেন স্বপ্নীল ডানা। রক্তরাঙা একটি গোলাপ চোখের সামনে তুলে ধরে বলবেনÑ‘তোমায় ভালোবাসি’।

ভালোবাসা দিবস নিয়ে অবশ্য বিতর্কেরও শেষ নেই। বলা হয়, কর্পোরেট দুনিয়া তাদের পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর ব্যবসায়িক স্বার্থে এমন একটি দিনের প্রসার-প্রচার ঘটিয়েছেন। কিন্তু নেপথ্যে যা-ই থাকুক বিশ্বায়নের প্রভাবে উত্তরাধুনিক ও নয়া উদারবাদী বাস্তবতায় মানুষ যখন ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী দর্শনের প্রতিভু, তখন একটি দিনের জন্যে হলেও যদি ভালোবাসা আর আÍীয়তাকে ঝালিয়ে নিয়ে নবোদ্যমে জীবন শুরুর ফুসরত হয়, সেটাই বা কম কি?

ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো। এ নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে গল্পটি প্রচলিত সেটি হচ্ছেÑ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের একটি ঘটনা। ওই ধর্মযাজক একই সঙ্গে চিকিৎসক ছিলেন। তখন রোমানদের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। সম্রাটের ধারণা হলÑ পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি যুবকদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমপিয়াসী তারুণ্যকে কী নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়? এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। চার্চে মোমবাতির আলোয় হচ্ছে তাদের স্বপ্নপূরণ। ধরা পড়লেন একদিন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে পোরা হলো। দেশজুড়ে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে যুবকশ্রেণীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান।

val-2val-3ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারারক্ষীর এক অন্ধ যুবতী মেয়েও ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হল হƒদয়ের বন্ধন। ধর্মযাজক নিয়ম ভেঙে প্রেম করেন। তারপর আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। যুবক-যুবতীদের সহানুভূতি আর ভ্যালেন্টাইনের নিজেরও প্রেম-বিয়ের এ খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড দিলেন। সেটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের আজকের এই ১৪ ফেব্র“য়ারি। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে নবোঢ়াকে তিনি চিঠি লিখলেন। যার হƒদয়ের কথা শেষ হয়েছিল এভাবেÑ ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’।

অতঃপর এ ভালোবাসার স্বীকৃতি আদায়ে পরবর্তী দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্র“য়ারিকে। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এ দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। গ্রিক ও রোমান উপকথার মতোই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে যে গল্প-কাহিনীই থাক, আজ যে তা ছড়িয়ে পড়েছে ভুবনজুড়ে। এদেশে হালে উদযাপিত হলেও সেই ষোড়শ শতক থেকে তা পাশ্চাত্যে পালিত হয়ে আসছে। এদিন কেবল প্রেম বিনিময় নয়, তরুণ-তরুণীদের মাঝে গোপনে বিয়েও ঘটে। রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, বাংলা একাডেমির বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুডের দোকান, লং ড্রাইভে যাওয়া অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে চলে প্রণয়ের নিবেদন।

চকোলেট, পারফিউম, শুভেচ্ছা কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস, প্রেমবার্তা, আংটি, প্রিয় পোশাক, বই অথবা রক্তগোলাপ উপহার হিসেবে দেয়া-নেয়া হয় এ দিন তরুণ-তরুণীদের মাঝে। অনেকে রাখিবন্ধনও করে। শুধু তরুণশ্রেণী নয়, পিতা-মাতা-সন্তানের ভালোবাসাও এ দিবসকে উদ্ভাসিত করে।

ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে অন্যান্য বছরের মতো এবারও নগরজুড়ে নানা অনুষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মেলা আর টিএসসি চত্বরের সবুজ ঘাসে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনোদনপিয়াসী নগরবাসীকে দারুণ আকৃষ্ট করে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলার বকুলতলা এবং রবীন্দ্র সরোবরেও নানা অনুষ্ঠান রয়েছে। সর্বোপরি অমর একুশে বইমেলায় ভালোবাসাপিয়াসী তরুণতরুণীর যে আজ ঢল নামবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।val-4

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.