যেভাবে শিল্পাকে বিয়ে এবং কোটিপতি হলেন বাস কন্ডাক্টরের ছেলে রাজ কুন্দ্রা

পর্নো ভিডিও তৈরি ও একটি অ্যাপের মাধ্যমে সেগুলো সরবরাহ করার অভিযোগে গ্রেফতার অভিনেত্রী শিল্পী শেঠির স্বামী ও ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রাকে আদালতে হাজির করা হয়। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুম্বাই পুলিশ।

এদিকে এমন খবরে তোলপাড় বলিউড পাড়া। কীভাবে এতো বিত্তশালী হয়েছেন রাজ কুন্দ্রা?  তার এতো সম্পদ অর্জনের পেছনে আর কি কি কালো অধ্যায় জড়িত? আইপিএলে ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে তার গ্রেফতারের ঘটনাটিও ফের আলোচনায় এসেছে। এসবের মাঝেই আলোচিত হয়েছে, কীভাবে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে বলিউড অভিনেত্রী শিল্পার বিয়ে হলো?

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, নেহায়েত দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাজ কুন্দ্রা। এক সময় তার বাবা বালকৃষ্ণ ব্রিটেনে ছোটখাটো একজন বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতেন। যা বেতন পেতেন তা দিয়েই চলত সংসার। অর্থাভাবে রাজ কুন্দ্রা তার কলেজের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

আর সেই ব্যক্তি ২০০৪ সালে সাকসেস ম্যাগাজিনে এশিয়ান বংশোদ্ভূত ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৯৮তম স্থানে উঠে আসেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে এই তালিকায় উঠে আসা সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন রাজ কুন্দ্রা।

নিম্মবিত্ত অবস্থা থেকে রাজের ধনী ব্যবসায়ী হওয়ার যাত্রাটা সহজ ছিল না অবশ্য। মাত্র দেড় লাখ রুপি মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন রাজ। নেপালের পশমিনা শালই তার ভাগ্যের চাকা দ্রুত গতিতে ঘুরিয়ে দেয়।

১৯৯৪ সালে নেপাল ভ্রমণে যান রাজ। সেখান থেকে পশমিনা শাল নিয়ে ব্রিটেনে ফিরে আসেন। বড় বড় সব ব্রিটিশ ফ্যাশন হাউসগুলোতে শালগুলো দেখান। এরপর শুরু হয় ব্যবসা।

কন্টেইনার ভর্তি করে পশমিনা শাল ব্রিটেনে নিয়ে দেদারসে বিক্রি করতে থাকেন। প্রথম বছরেই ২০ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করেছিলেন রাজ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

সামান্য বাস কন্ডাক্টারের ছেলে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন দ্রুতই। শাল আমদানির ব্যবসা যখন তাকে একটি অবস্থানে এনে দেয় তখন হীরার ব্যবসায় হাত দেন। সেখানেও সফল হন।

এর পর রাশিয়া, ইউক্রেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে খনিজ, রিয়েল এস্টেট এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবসায় জড়িত হন রাজ। এভাবেই একের পর এক সাফল্যগাঁথা লিখতে থাকেন রাজ।

তবে ভারতীয় পুলিশের চোখে রাজ অপরাধীর দৃষ্টিতে ছিলেন গত কয়েক বছর ধরে।

২০১২ সালে ভারতের জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন রাজ। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। আইপিএল দল রাজস্থান রয়্যালসে একটি অংশীদারিত্ব ছিল রাজ কুন্দ্রার।

তবে থেকেই পুলিশি নজরদারিতে ছিলেন রাজ। সম্প্রতি এক মডেল-অভিনেত্রীর অভিযোগের ক্লু ধরে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।

পর্নোভিত্তিক চলচ্চিত্র তৈরির মূল হোতা হিসেবে মুখোশ উন্মোচন হয়েছে শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার সূত্র: বিবিসি

ভারতে গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ, প্রেম করেই রাজের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন শিল্পা। এক সাক্ষাৎাকারে শিল্পা নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। কীভাবে রাজের সঙ্গে তার পরিচয় ও পরে প্রণয় সে বর্ণনাও দেন এ অভিনেত্রী।

তিনি জানান, কাজের সূত্রে প্রায়শই লন্ডনে যেতে হতো তার। সেখানে একবার বিগ ব্রাদার নামে একটি টিভি শোতে অংশ নেন শিল্পা শেঠি। সেই শোতেই রাজ কুন্দ্রার সাথে সাক্ষাৎ শিল্পার। প্রথম দেখাতেই রাজকে পছন্দ হয় শিল্পার। বন্ধুত্ব হয়। একটা সময় রাজকে মনেও ধরে যায়। কিন্তু তিনি জানতে পারেন, রাজ বিবাহিত।

কিন্তু শুরুতে শিল্পা জানতেন না যে সাবেক স্ত্রী কবিতার সঙ্গে রাজের তখন বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। ধীরে ধীরে জানতে পারেন রাজের অতীতের ব্যপারে।

এদিকে রাজও নানা কায়দায় শিল্পার মন জয়ের চেষ্টা করতে থাকেন। একদিন আচমকা শিল্পার কাছে পার্সেল আসে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের অত্যন্ত মূল্যবান পার্স উপহার দেন রাজ। এতো দামি উপহার পাঠাতে বারণ করে দেন শিল্পা।

ওই সময় শিল্পার ভয় ছিল, রাজের সঙ্গে গড়া চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরপরও রাজ প্রেমের ইঙ্গিত দিতেন শিল্পাকে। এমনকি একদিন শিল্পাকে নিজের ‘ব্যাচেলর প্যাড’-এ আসতে নিমন্ত্রণ জানান রাজ।

তখন শিল্পা সাফ জানিয়ে দেন, সংসারি হলে ভারতে হবেন। লন্ডনে গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তার কিছু সময় পরে রাজ মুম্বাইয়ে বাড়ি কেনেন। আর শিল্পাকে বলেন, সেখান থেকেই তার ব্যবসা পরিচালনা করবেন। রাজের এমন সিদ্ধান্তে আপ্লুত হয়ে পড়েন শিল্পা। তার পর থেকেই রাজের সঙ্গে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়েন।

২০০৯ সালের নভেম্বরে ভারতে বিয়ে করেন এ জুটি। একই বছর রাজ কুন্দ্রা আইপিএল টিম রাজস্থান রয়্যালসে ১১.৭ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন।

রাজ বর্তমানে দুই সন্তানের জনক এবং শিল্পা শেঠি ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য সংস্থাও পরিচালনা করেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.