সৌদি শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা

Bangladesh-Saudiএভিয়েশন নিউজ: সৌদি আরবের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই দেশটি সফর করবেন। কূটনৈতিক সূত্রে আভাস মিলেছে যে, সৌদি এমপ্লয়ার্স এজেন্টদের শর্তে রাজি হলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে ফের পুরোপুরি খুলে যেতে পারে বাংলাদেশের বৃহত্তম এই শ্রমবাজার। ২০০৯ সাল থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো অনেক কমে যায়। ইতিমধ্যে সৌদি আরবের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের জন্য সময়সূচি জানতে চাওয়া হয়েছে। ঢাকায় সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার জানান, তারা যেকোনো সময়েই রিয়াদ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ পাওয়ার আশা করছেন।

সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী কর্মী রয়েছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর লক্ষাধিক কর্মী সৌদি আরব গেছেন। ২০০৯ সাল থেকে দেশটি বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে কর্মীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়াকে দায়ী করা হয়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, ২০০৭ সালে দুই লাখ চার হাজার ১১২ জন ও ২০০৮ সালে এক লাখ ৩২ হাজার ১২৪ জন কর্মী সৌদি আরব গেছেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আকস্মিক কর্মী নিয়োগ কমে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৬৬৬ জন এবং ২০১০ সালে সাত হাজার ৬৯ জন। সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণে এই কমের ধারা এখনও অব্যাহত আছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সৌদি আরব সফরে শ্রমবাজার চালুর বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরব সফর করেছিলেন। তবে ২০১৩ সালের নভেম্বরে তিনি সৌদি আরব যান পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য। সৌদি শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। গত বছরের ১১ মে থেকে ৩ নভেম্বর সৌদি আরব বিদেশী কর্মীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। ওই সুযোগে প্রায় আট লাখ বাংলাদেশী বৈধ হয়েছেন। চলতি বছরের ১৬ ফেব্র“য়ারি থেকে সৌদি সরকার বাংলাদেশী কর্মীদের ইকামা পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশী কর্মীরা তাদের চাকরি বদল করতে পারছেন।

সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল গত বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করে। সৌদি আরব বাংলাদেশী কর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফলে তারা বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় বিশেষ করে অতীতে অপরাধ করেছেন এমন ব্যক্তিদের কিভাবে সৌদি আরবে যাওয়া বন্ধ করা যায় তা জানতে আগ্রহী হন। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা খুঁটিনাটি জেনেছেন। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলটি দেশে ফিরে গিয়ে সরকারের কাছে খুবই ইতিবাচক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের সুপারিশের ভিত্তিতে গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে বলে সিদ্ধান্ত হলেও এখনও পর্যন্ত সৌদি আরব ব্যাপকহারে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু করেনি।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সৌদি আরব এখন পর্যন্ত যত কর্মী নিয়োগ করেছে তার প্রায় সবই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে গেছে। সৌদি আরবও ওই দেশের ১৬টি এমপ্লয়ার্স এজেন্টকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব দিয়েছে। এসব এজেন্ট সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাহিদা পেলে কর্মী নিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। কিন্তু একশ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সি অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় আদায় করে প্রতারণা করার কারণে বাংলাদেশ সরকার রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সৌদি এমপ্লয়ার্স এজেন্সিগুলো কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে নিয়োগে আগ্রহী নয়। এ কারণেও সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে অধিক হারে কর্মী নিয়োগ করতে পারছে না দেশটির নিয়োগকারীরা। কারণ, এই ১৬ এজেন্সির মাধ্যম ছাড়া কেউ বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না। সৌদি ১৬ এজেন্সি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ শর্তের অগ্রগতি হলে সৌদি শ্রমবাজার পুরোপুরি চালু হতে পারে।

যুবরাজ তালালের কোম্পানিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ :
সৌদি যুবরাজ আল ওয়ালিদ বিন তালাল ২০১২ সালের জুনে বাংলাদেশ সফর করেন। এই সৌদি ধনকুবের তার পত্নী রাজকুমারী আমিরাহকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করার সময় তাকে ‘বাংলাদেশ মৈত্রী পদক’ দেয়া হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশে পর্যটন খাতে তার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি যুবরাজ তালাল রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছেন। তার রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নাম ‘কিংডম হোল্ডিং কোম্পানি’। এই কোম্পানি অনেক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পে বিপুলসংখ্যক নির্মাণ শ্রমিক প্রয়োজন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশ থেকে এ কাজে কর্মী নিয়োগের জন্য যুবরাজ তালালের প্রতি অনুরোধ জানাতে পারেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.