আন্তর্জাতিক কলে হাজার কোটি টাকার লোকসান সরকারের

imagesটেলিযোগাযোগ খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মুঠোফোনের সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এর মাধ্যমে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর ওপর করের বোঝা বাড়ানো হলেও আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা থেকে গত এক বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। দেশে আসা আন্তর্জাতিক কলের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

টেলিযোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছরের ২৪ জুন থেকে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব আইওএফ (আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম) নামের বেসরকারি একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এরপর এ খাত থেকে সরকারের ক্ষতি বেড়েছে। মূলত দুভাবে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, আইওএফ প্রতিষ্ঠার পর বিদেশ থেকে কল আনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় গড়ে প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট কল কমে গেছে। এতে গত এক বছরে সরকার হারিয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বৈধ পথে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে অবৈধ ভিওআইপি কলের সংখ্যাও।

এর বাইরে প্রতি মিনিটের জন্য কল রেট ৪০ পয়সা বাড়ানো হলেও সরকার তার ভাগ পাচ্ছে না। এর ফলে সরকার হারিয়েছে আরও ৫০০ কোটি টাকা। অথচ ৪০ পয়সা কল রেট বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা গত এক বছরে বাড়তি আয় করেছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে এসেছি, যে মূল্যে কল আসে, সেই মূল্যেই যাতে আয় ভাগাভাগি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত হলে রাজস্ব ক্ষতির চিত্রটি এমন হতো না।’ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সুপারিশের পরও কেন সিদ্ধান্ত হচ্ছে না, এমন প্রশ্ন করলে তারানা হালিম এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে মূল্যে কল আসবে, সে অনুপাতেই যাতে আয় ভাগাভাগি না হয়, সে জন্য একটি গোষ্ঠী চেষ্টা করছে।

নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশ থেকে আসা প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয় তার ৪০ শতাংশ সরকার, সাড়ে ১৭ শতাংশ ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), সাড়ে ২২ শতাংশ মুঠোফোন অপারেটর আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পায়। আইজিডব্লিউ অপারেটররা এখন ১ টাকা ৬০ পয়সা দরে কল আনলেও আয় ভাগাভাগি হচ্ছে ১ টাকা ২০ পয়সা দরে।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কল রেটের সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর রেট) তিন সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় সেন্ট (১ টাকা ২০ পয়সা) করা হয়। সর্বনিম্ন এ রেটে রাজস্ব ভাগাভাগির নিয়ম রেখে আন্তর্জাতিক কল আনার নতুন পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এরপর সর্বনিম্ন কল রেট কয়েক দফা বাড়ানো হয়। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরের পর এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি সরকার।

কল টার্মিনেশন রেট যখন তিন সেন্ট ছিল তখন কল রেট বাড়ানোর সর্বোচ্চ সীমা (সিলিং রেট) ছিল সাড়ে তিন সেন্ট। কিন্তু কল রেট কমিয়ে দেড় সেন্ট করার সময় আর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। কল রেটের সর্বোচ্চ সীমা না থাকায় এখন এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছে আইজিডব্লিউ অপারেটররা।

দেশে বর্তমানে ২৩টি আইজিডব্লিউ অপারেটর থাকলেও মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এ সাত আইজিডব্লিউ অপারেটর মিলে আন্তর্জাতিক কল নিয়ন্ত্রণের জন্য কমন ইন্টারন্যাশনাল পয়েন্ট (সিআইপি) নামের একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আইওএফের উপপ্রধান নির্বাহী খন্দকার মাজহারুল হক বলেন, আইওএফ গঠনের পর এ খাতে সরকারের কোনো বকেয়া নেই।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.