রানওয়ে ক্লিয়ারেন্স না থাকায় আবারও ঢাকার আকাশে দীর্ঘ সময় চক্কর দিতে হয়েছে দেশী-বিদেশী ৮টি ফ্লাইটকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ৪টি ফ্লাইট বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ ঘটনায় প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট কোনো ফ্লাইট নামতে পারেনি। এ কারণে ঢাকার আকাশে উড়োজাহাজ জট সৃষ্টি হয়। শুক্রবার দুপুরে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ভারি উড়োজাহাজ অবতরণের কারণে চাকার আঘাতে বিমানবন্দরে রানওয়ের মাঝামাঝি স্থানে একটি লাইটের গ্লাস ও বিটুমিন ভেঙে যায়। দুপুর ১২টার দিকে টাওয়ার থেকে এ অবস্থা দেখে দ্রুত আকাশে থাকা সব ফ্লাইটের ওপর অবতরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এতে কোনো ফ্লাইট রানওয়েতে নামতে না পেরে আকাশে চক্কর দিতে থাকে। পরে টাওয়ার থেকে চারটি ফ্লাইটকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক হয়। এর আগেও গত ৮ জুন রানওয়েতে ধাতব বস্তু পড়ে থাকার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী একটি বিশেষ ফ্লাইটকে আকাশে ৩১ মিনিট চক্কর দিতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় সিভিল এভিয়েশন ২টি এবং বাংলাদেশ বিমান ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত একটি কমিটিও তাদের রিপোর্ট জমা দেয়নি। উল্টো ওই ঘটনাকে ‘তুচ্ছ ঘটনা’ বলে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আবারও শাহজালালে বড় ধরনের ফ্লাইট বিপর্যয়ের আশংকা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ আছে, নিুমানের কংক্রিট, বিটুমিন আর গ্লাস দিয়ে রানওয়েতে লাইট বসানোর কারণে এসব ঘটনা ঘটছে।
জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী বলেন, রানওয়ের মাঝখানের একটি লাইটের চারপাশের বিটুমিন সরে যাওয়ায় সেটা টাওয়ারের নজরে আসে। এটা মেরামত করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। তাহলে জানা যাবে কী কারণে লাইটের বিটুমিন ভেঙে গিয়েছিল।
সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) উইং কমান্ডার জিয়াউল কবির জানান, রানওয়ের সেন্ট্রাল লাইনের লাইটে কিছুটা বিচ্যুতি হওয়ায় তাৎক্ষণিক তা ঠিক করার উদ্যোগ নেয় প্রকৌশল বিভাগ। মূলত ছুটির দিনেও প্রকৌশল বিভাগের ত্বরিত ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
জানা যায়, শুক্রবার দুপুুর দেড়টার দিকে রানওয়ের ওই লাইটের চারপাশের কিছু বিটুমিন সরে যাওয়ার বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে। টাওয়ারে বসে এটা শনাক্ত করার পর জানানো হয়, সিভিল এভিয়েশনের শীর্ষপর্যায়ে। এতে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকৌশল বিভাগের প্রধান সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আবাসিক এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করেন এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই তা সংস্কার করতে সক্ষম হন। এ সম্পর্কে একজন পরিচালক জানান, শুক্রবারের এ ঘটনা তাৎক্ষণিক নজরে আসায় বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় হয়নি। রানওয়ের মাঝামাঝি স্থানে এ ধরনের ঘটনার কারণে পুরোদিনই রানওয়ে বন্ধ রাখা দরকার হতে পারত। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগের বিচক্ষণতার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে লাইট মেরামত করে উড়োজাহাজ ওঠানামা স্বাভাবিক করা হয়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুক্রবার রানওয়ে থেকে যেসব কংক্রিট ও লাইনের ভাঙা অংশ উদ্ধার করা হয়েছে তা না সরালে ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা ছিল। একইভাবে রানওয়ের ভাঙা অংশে কোনো উড়োজাহাজের চাকা ঢুকলে চাকা ফেটে গিয়ে জাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়তে পারত। কংক্রিট ও ভাঙা বস্তুগুলো উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ঢুকে যেতে পারত। এতে আগুন ধরার আশংকা ছিল। এছাড়া চাকার সঙ্গে ঘর্ষণেও উড়োজাহাজে আগুন ধরে গিয়ে বড় ধরনের বিপর্যয়ও ঘটতে পারত।
এদিকে শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। একই সঙ্গে কোন উড়োজাহাজের কারণে রানওয়ের লাইট ভেঙে গেছে, তাও শনাক্ত হয়নি।
আরও খবর