পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তার হত্যা মামলার তদন্ত নতুন চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ওই ঘটনায় মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে ঘিরে এমন কিছু তথ্য মিলেছে যাতে পুলিশ বিভাগের অনেকেরই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। জন্ম দিয়েছে নতুন চাঞ্চল্যেরও।
এরই মধ্যে এসপি বাবুল আক্তারকে পুলিশ হেফাজতেও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল পুলিশ সূত্র।
শুক্রবার (২৪ জুন) গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে যায় পুলিশ। খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম এসপি বাবুল আক্তারকে নিয়ে যান বলে প্রাথমিক সূত্র জানায়।
পরে রাত আড়াইটার দিকে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আইজিপির রেফারেন্সে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম এসে বাবুল আক্তারকে নিয়ে গেছেন। এখনো তাকে ফেরত দেননি।
এদিকে রাত থেকেই বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যাচ্ছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা জঙ্গি, সোনা চোরাচালানি, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দিক থেকে সন্দেহের তীর ঘুরিয়ে দিচ্ছে খোদ বাবুল আক্তারের দিকেই।
তবে এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেনি সংশ্লিষ্ট কেউই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মো.কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তবে নগর পুলিশের দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে মিতু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া চারজনের প্রত্যেককে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আটক চারজনের মধ্যে দুজনই বাবুল আক্তারের সোর্স।
সূত্র জানায়, আটকের পর চারজনের আলাদা আলাদা করে জবানবন্দিও নিয়েছে। এতে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এছাড়া খুনের নির্দেশদাতাকে নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যও তারা প্রকাশ করেছে। মূলত এরপরই পুলিশ বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।
শুক্রবার রাজধানীতে ২৪ তম বিসিএস’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের ইফতার মাহফিলে অংশ নেন বাবুল আক্তার। ইফতার মাহফিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিও ছিলেন।
দায়িত্বশীল একটি পুলিশ সূত্র জানায়, ওই ইফতার মাহফিলেই আইজিপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ইঙ্গিত দেন।
এর আগে আটক হওয়া চারজনের জবানবন্দির ভিডিও চিত্রও বাবুল আক্তারকে দেখানো হয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের উপ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে ভিন্ন কিছু পাওয়া যাচ্ছে। পুরো হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সিএমপির সঙ্গে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এক সপ্তাহ পর আইজিপির নির্দেশে ঘটনা তদন্তে পাঁচটি সমন্বিত টিম গঠন করা হয়। টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। চার খুনিকে আটকের পর বুধবার বনজ কুমার মজুমদার চট্টগ্রাম ছাড়েন বলে সূত্র জানিয়েছে।