ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্বিতীয় বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এ নতুন আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধন করেন।
এদিন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে সিল্কসিটি সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে নতুন ব্রডগেজ ট্রেন সার্ভিসও চালু করেন। একইসঙ্গে তিনি যান চলাচলের সুবিধার জন্য খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ইউলুপ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন বাংলাদেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নবতর অধ্যায়ের সংযোজন। নতুন ট্রেনে করে বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের মজাটাই হবে আলাদা।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বিশ্বব্যাংক’সহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর প্রেসক্রিপসনে দেশের রেল সার্ভিসকে প্রায় বন্ধই করে দিতে বিভিন্ন রুট থেকে রেললাইন পর্যন্ত সরিয়ে ফেলে। সে অবস্থা থেকে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের সরকার রেল পুনর্গঠনে উদ্যোগী হয়।
তার সরকার বুলেট ট্রেন এবং পাতাল ট্রেন চালুর উদ্যোগও গ্রহণ করবে বলে এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রেলপথ এবং নদ-নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং দাতাগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব স্বার্থে এই যোগাযোগের সহজ এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম দু’টিও বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। তারা বঙ্গবন্ধু সেতুতেও রেললাইন স্থাপনে রাজি ছিল না। কিন্তু আমরা তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাতারা অর্থ সহায়তা দেবে, কিন্তু আমাদের ভাল-মন্দ আমাদেরই বুঝতে হবে। তারা কিন্তু বুঝবে না।
এ প্রসঙ্গে নিজস্ব সিদ্ধান্তে অটল থাকায় এখন বিশ্বব্যাংক বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে একটি পৃথক রেলসেতু নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন দিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে রেলওয়ের যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধী যারা, তারা যেন রেলের সুবিধা পেতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য কাজ করে এবং কীসে কল্যাণ কীসে উন্নয়ন তা ভালো করে জানে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালে আমরা উচ্চ আয়ের দেশ হবো।
উদ্বোধন হওয়া নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। শনিবার ছাড়া এটি নিয়মিত চলাচল করবে। ট্রেনটি সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছুবে। আবার চট্টগ্রাম থেকে বিকেল ৫টায় ছেড়ে রাত পৌনে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছুবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৬ বগির বিশেষ ট্রেনটি ৭৪৬ সিটের। ৪ বগিতে আছে ২২০টি আসন, শোভন চেয়ার ৪২০টি এবং এসি বার্থ আসন ৬৬টি। এছাড়া, দু’টি খাবার গাড়ির সঙ্গে ৪০টি আসন রয়েছে।
অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, রেল সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বক্তৃতা করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা মিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিউল হক, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
কমলাপুর থেকে ফেরার পথে প্রগতি সরণি-বনশ্রী সংযোগ সড়কে নেমে হাতিরঝিল প্রকল্পের সাউথ ইউ-লুপের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর তিনি অংশ নেন মোনাজাতে।