আকাশে ওড়া হাঁস

Has-1কী আশ্চর্য কথা বলো তো! ওরা হাঁসও, আবার আকাশেও ওড়ে। কিন্তু আমরা তো এতদিন জেনে এসেছি, হাঁস একটি গৃহপালিত পাখি। এরা বড়জোড় নদী বা পুকুরের পার থেকে পানিতে উড়ে যেতে পারে। কিন্তু পানি থেকে এরা পুকুর বা নদীর পারে উড়ে আসতে পারে না। পানিতে বা ডাঙায় পাখা ঝাপটিয়ে একটু একটু উড়তে পারে বটে। তবে উড়ে বড় ধরনের কোনো জায়গা পরিবর্তন করতে পারে না।

কিন্তু আজকে যে হাঁসের কথা বলব, তারা কিন্তৃ দিব্যি আকাশে উড়ে। এই হাসটির নাম বালিহাঁস। যারা বিল, হাওড়-বাওড়, ও বড় নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাস করে তারা বালিহাঁস দেখেনি এমন হতেই পারে না। এরা বেশ ছোট প্রজাতির হাঁস। মোটামুটি দৈর্ঘ্যে ৩৩.৫ সেন্টিমিটার, ডানা ১৫.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৮ সেন্টিমিটার, লেজ ৭.৩ সেন্টিমিটার, পা ২.৪ সেন্টিমিটার। আর সব মিলিয়ে শরীরের ওজন কমবেশি মাত্র ২৫০ গ্রাম।

স্ত্রী ও পুরুষ বালিহাঁসকে কীভাবে আলাদা করে চেনা যায় জানো? মাথার চাঁদি ও পিঠ কালচে বাদামি রঙ হয় যেটির সেটি হচ্ছে পুরুষ ধলা বালিহাঁস। পুরুষ ধলা বালিহাঁসের এই কালচে পিঠে সূর্যের আলো পড়ে ঝলমলে সবুজ আভা ছড়িয়ে দেয়। দেখতে তখন এত সুন্দর দেখায় ওদের! কাছে গেলেই টুপ করে উড়াল দিয়ে হারিয়ে যায়। ধলা বালিহাঁসের এই নামকরণের কারণ হল এদের মুখ, ঘাড়, ও দেহতল হয় সাদা রংয়ের। আর সাদা মানে ধলা এটা তো তোমরা জানোই। পুরুষ বাঁলিহাসের গলায় স্পষ্ট কালো বলয় আছে। সাদা ডোড়া ডানার এ পাখিটির চোখ হয় লালচে বাদামি।

অনুজ্জ্বল ফিকে সাদা দেহতলের যে হাঁসটি সেই হচ্ছে স্ত্রী ধলা বালিহাঁস। এদের ডানার প্রান্ত সাদা। চোখ দুটো বাদামি। চোখ বরাবর আবার কাজলের মত কালো চক্ষু-রেখা থাকে। ঠোঁটটি দেখতে কালচে-জলপাই বা বাদামি রঙের। ঠোঁটের নিম্নভাগ থাকে হলুদাভ। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের পা ও পায়ের পাতা কালচে-বাদামি বা কালো রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাঁস দেখতে স্ত্রী হাঁসের মত। তবে চক্ষু-রেখাটি চওড়া এবং দেহতলের রঙে রয়েছে পার্থক্য।

ধলা বালিহাঁস জলজ উদ্ভিদ বেশি এমন হ্রদ, বড় পুকুর, অগভীর লেগুন, হাওর ও জলাবদ্ধ ধানক্ষেতে বিচরণ করে। শীতের মরা নদী ও বড় বড় জলাশয় ছাড়া অন্য কোথাও এদের খুব কমই দেখা যায়। এরা দলবদ্ধ হয়ে সাঁতার কাটতে ও পানিতে ভাসতে পছন্দ করে। কখনও কখনও পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় নদীর উজান বা ভাটির দিকে।

কখনও আবার সারা বছরই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এক জোড়া বুনোহাঁস বসবাস করে। পরিচিত কোনো জলাভূমি থেকে খাবার খায়। বাসা বানায় গাছের খোঁড়লে। হাওড়-বাঁওড়, বিল-ঝিল, জলাশয়ের কাছের নারকেল, তাল, খেজুরগাছের খোঁড়লে বালিহাঁসেরা বাসা বেঁধে ডিম পারে। তবে কাঁশবনের ঝোপে গর্ত করে জঙ্গল Has-2দিয়ে বানানো বাসাও দেখা যায়। এরা ১৪/১৫টি ডিম পারে।

বালিহাঁসের উড়ার ভঙ্গি ও ডানার ঝাপটানো বেশ চমৎকার। এরা উড়তে উড়তেই ডাকে। জলজ উদ্ভিদের সবুজ কচি কাণ্ড, বীজদানা, চিংড়িমাছ, কাঁকড়া, পোকামাকড় ও পোকামাকড়ের লার্ভা এগুলো হল বালিহাঁসের খাবার। বালিহাঁসের ডাক বেশ গম্ভীর। ডিক্-ডিক্-ডিরিক্-ডিক, গ্যাহ…গ্যাগি… গ্যাহ অথবা, কাওয়াক-কুওয়াক-কুওয়াকি।

বাংলাদেশের বাগেরহাটে এদেরকে বলে ভেড়ার ঢোঁশ। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এদের দেখা যায়।

বিগত কয়েক দশক যাবত এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। বাড়েনি এদের সংখ্যা, আবার কমেও যায়নি আশংকাজনক হারে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। মানুষ ছাড়াও বাজপাখি, ইঁদুর, বনবিড়াল, চিল এদের প্রধান শত্রু। আমাদের সবার উচিত অন্য সকল বন্যপ্রাণীর মতো এই পাখিটিকেও রক্ষা করতে সচেষ্ট হওয়া।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.