মালয়েশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটের নামে প্রতারণা

mye20160625204831মালয়েশিয়ায় বিদেশি অবৈধ শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিটের নামে প্রতারণার অভিযোগে নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠান মাই ইজিকে ২২ লাখ ৭০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাই ইজির কার্যক্রমে আরো কোনো ত্রুটি আছে কি না ইমিগ্রেশন বিভাগসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগ তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার জন্য চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির সরকার মাই ইজি কোম্পানির মাধ্যমে রি-হায়ারিং প্রোগ্রাম চালু করেছিল ।

গত শুক্রবার মাইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিদেশি শ্রমিকের বৈধতা নিবন্ধনের জন্য মাই ইজি কিছু অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাদের (শ্রমিকদের) মাঝে কিছু মিথ্যা বানোয়াট কথা যোগ করে বীমার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। যার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়।

রোববার মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক দ্য স্টার ও “নিউ স্ট্রেইটস টাইমস অনলাইন” সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ার কম্পিটিশন কমিশন মাই ইজি সার্ভিস অবৈধভাবে বিদেশি শ্রমিকদের সাথে (পি এল কে এস) ভিসা রিনিউ করার নামে যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা তদন্ত করার পর প্রমাণ পেয়ে ২২ লাখ ৭০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা করেছে।

কমিশন সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি এবং ২ মে থেকে ৬ই অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত প্রতিদিনের জরিমানা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫শ রিঙ্গিত করে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের পর অবৈধ অভিবাসীদের মালয়েশিয়ার সরকার আর বৈধতার ঘোষণা দেয়নি। নতুন ঘোষণা হবে বলে কিছু আদম বেপারী মিডিয়া এবং ফেসবুকে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল। আর এসব দেখে সহজ সরল অসহায় শ্রমিকরা মালয়েশিয়া আসার জন্য জীবনের শেষ পুঁজি বিক্রি করে। কেউ নদী পথে, কেউ বা এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টে আবার কেউ এসেছে স্টুডেন্ট ভিসায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রি-হিয়ারিং এর নিবন্ধনে অতিরিক্ত সার্ভিস ফিসহ শ্রমিকদের গোনতে হচ্ছে প্রায় ৪ থেকে ৫শ’ রিঙ্গিত। প্রায় ১৬টি ক্যাটাগরিতে টাকা জমা দিতে হচ্ছে। এদিকে যারা আবেদন করছেন তাদেরকেও পারমিটের কোনো গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে না। যদি কোনো আবেদন নাকচ করা হয় তাহলে নিবন্ধনের জন্য জমা দেয়া টাকা ফেরত দেয়া হবে কি না তার সদোত্তর মিলছে না।

সব মিলিয়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চললেও কেউ সাহস পাচ্ছেন না নিবন্ধন করতে। যারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন পুলিশের চিরুনি অভিযানে তাদেরও গণহারে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রিকে একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারকে আলাদা করা হয়েছে। মোট ৫টি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ একই গ্রুপের ১৫টি দেশের শ্রমিকদের নিবন্ধন করার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাই ইজির নেতৃত্বে পিএমএফ কনসোর্টিয়াম করা হয়েছে ৩টি কোম্পানিকে। মাই ইজির সার্বিক তত্ত্বাবধানে কন্সট্রাকশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস সেক্টর, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে সর্বমোট ৬২৫০ রিঙ্গিত জমা দিতে হয়।

এছাড়া নিবন্ধন একহাজার ও ফিংগার প্রিন্ট ১৫০০ মোট ২৫০০ রিঙ্গিত অতিরিক্ত’ নেয়া হচ্ছে। ফিংগার করার সময় মাই ইজির অফিসিয়াল সিম কার্ড দেয়া হচ্ছে আবেদনকারীদের। যার মাধ্যমে আবেদনকারীর ভিসা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারবেন এসএমএস এর মাধ্যমে।

তবে আবেদনকারীরা ভিসা পাবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা মিলছে না তাদের কাছ থেকে। মাই ইজির মাধ্যমে নিবন্ধনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক এ প্রতিবেদককে বলেন, নিবন্ধন করেছি কিন্তু কবে যে পারমিটি পাবো তা সঠিক করে বলতে পারছেন না মাই ইজির কর্মকর্তারা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.