৬ প্রকল্পে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঋণ দিচ্ছে জাইকা

file (6)রাজধানীর মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (দ্রুত গণপরিবহন) উন্নয়নসহ ৬টি বড় প্রকল্পে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা (১৭০ বিলিয়ন ৫৩৫ মিলিয়ন ইয়েন) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাপানের সরকারি সহায়তা সংস্থা জাইকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে জাপানের সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা।

দেশটির ৩৭তম (ওডিএ) ঋণ প্যাকেজের আওতায় এ অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

বুধবার (২৯ জুন) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন-২ কক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বিনিময় নোট ও ঋণ চুক্তি সই হয়।

বিনিময় নোট চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম ও জাপানের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

অপরদিকে, ঋণ চুক্তি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম ও জাইকার চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ মিকিও হেতাদে নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৬টি বড় প্রকল্পের বিপরীতে সহজ শর্তে ১৭০ বিলিয়ন ৫৩৫ মিলিয়ন ইয়েন ঋণ দিচ্ছে জাইকার। এর মধ্যে যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পে ২ হাজার ৪৬৪ মিলিয়ন ইয়েন, আন্তঃসীমান্ত সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে (বাংলাদেশ) ২৮ হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ইয়েন, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্পে (দ্বিতীয়) ৭৫ হাজার ৫৭১ মিলিয়ন ইয়েন, মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প-২ ৩৭ হাজার ৮২১ মিলিয়ন ইয়েন, এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফিনান্সিং প্রকল্পে ১১ হাজার ৯৮৮ মিলিয়ন ইয়েন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে ১৬ হাজার ৯৬৬ মিলিয়ন ইয়েন।

এ ঋণের সুদের হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এবং পরিশোধের সময় সীমা ৪০ বছর, যা পরবর্তীতে আরো ১০ বছর বৃদ্ধি করা যাবে।

এসময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চেনা বাংলাদেশ অচেনা হয়ে যাবে। বদলে যাবে বর্তমান চেহেরা। সেতু, অবকাঠামো, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাপানের সহযোগিতায় এসব বড় প্রকল্প দেশ এগিয়ে নিবে।

তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র বিমোচনে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

এমএ মান্নান বলেন, উন্নয়ন সহায়তা প্রাপ্তিতে সরকার এখন পশ্চিমমুখি ছেড়ে পূর্বমুখি হচ্ছে। এক সময় আমরা সচরাচর পশ্চিমমুখি ছিলাম, হয়ত উপনিবেশিক শাসনের কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন আমরা পশ্চিমের পাশাপাশি পূর্বমুখিও হচ্ছি।

জাইকার চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ মিকিও হেতাদে বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে স্থাপনের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা এ চুক্তি সই হলো। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও অর্জনের সহযাত্রী হতে পেরে জাপান অত্যন্ত গর্বিত।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেলওয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে যমুনা নদীর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণ করবে। এ প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন অপেক্ষা আছে।

অপরদিকে, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাধাগুলো অতিক্রমের লক্ষ্যে আন্তঃসীমান্ত সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প (বাংলাদেশ) এ বছরের ২৬ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মাস রেপিড ট্রানজিট (এমআরটি) উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এছাড়া এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফিনান্সিং প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.