ঢাকার গুলশানে এক ক্যাফেতে অস্ত্রধারীদের হামলায় জিম্মি পরিস্থিতি সৃষ্টির ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটেছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঘণ্টাখানেকের এই অভিযানের পর হলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে অন্তত ছয়জনের লাশ পাওয়ার খবর দিয়েছেন এক র্যাব কর্মকর্তা।
উৎকণ্ঠা নিয়ে রাতভর ৭৯ নম্বর রোডের মোড়ে অপেক্ষায় থাকা এক স্বজনের প্রশ্নের জবাবে সকালে অভিযান শেষে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘১৩ জন সেইফ’।
ওই ক্যাফেতে শুক্রবার রাতে খেতে গিয়ে যারা জিম্মি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কতজন নিহত হয়েছেন- সে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ ও র্যাব সদস্যরাও।
পূর্ণাঙ্গ তথ্যের জন্য সেনা সদরদপ্তরের সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
অবশ্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের জবাই করা লাশ তারা ভেতরে পেয়েছেন।
হামলাকারীদের কাউকে জীবিত আটক করা গেছে কি না, ঠিক কতজনকে তারা জিম্মি করেছিল, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে কতজন বিদেশি নাগরিক- এসব বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনও মেলেনি।
হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি সঙ্কট শুরুর ঘণ্টাপাঁচেক পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
আইএসের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এসব খবরে দাবি করা হয়, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৪০ জন, যাদের কয়েকজন বিদেশি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকজনের রক্তাক্ত লাশের ছবি দেখিয়ে সেগুলো হলি বেকারিতে জিম্মি বিদেশি নাগরিকদের বলে দাবি করেছে ‘আমাক’।
তবে কারা এই হামলার পেছনে রয়েছে, এটি আদৌ জঙ্গি হামলা কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি পুলিশ বা র্যাবের কোনো কর্মকর্তা।
সকালে সামরিক বাহিনীর কমান্ডো দল উদ্ধার অভিযান শুরু করলে ঘণ্টাখানেক ব্যাপক গোলাগুলি চলে। প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান অংশ নেয় অভিযানে।
আধা ঘণ্টায় সহস্রাধিক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় দূর থেকেও।
কূটনৈতিক পাড়ায় হলি আর্টিজান বেকারি নামের ওই ক্যাফে থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দূরের এক বাড়ির বাসিন্দা জানান, তিনি পাশের প্রায় খালি একটি ভবন থেকে টেলিস্কোপ লাগানো স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখতে পান। গুলি ছোড়া হয় সাঁজোয়া যান থেকেও।
পরে সেনা সাঁজোয়া যান হলি বেকারির দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকে। ওই কম্পাউন্ডের বাইরের দিকে থাকা পিজা কর্নার এ সময় গুঁড়িয়ে যায়।
হলি বেকারিতে সাঁজোয়া যান নিয়ে ঢোকার সময় লাগোয়া লেক ভিউ ক্লিনিকের পার্কিংয়ে রাখা দুটি গাড়ি দুমড়ে যায়।
যে সড়কে ওই বেকারি, সেই ৭৯ নম্বর সড়কের মোড় থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে তিনি ওই ভবনের দিকে যেতে দেখেন। কিছু সময় পর একদল চিকিৎসকও স্ট্রেচার নিয়ে ওই ক্যাফের ভেতরে যান।
অন্তত একজন বিদেশি নাগরিক সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম।
রাতে হামলার পরপরই ক্যাফে থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন এমন একজন কর্মী বলেছিলেন, অন্তত ২০ জন বিদেশি সেখানে ছিলেন তখন। গণমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী,সব মিলিয়ে জিম্মির সংখ্যা ছিল আরও বেশি।
সকাল ৯টার পর আরও কয়েক দফা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় ক্যাফের ভেতর থেকে। পরে জানা যায়, হামলাকারীদের পরিত্যক্ত গ্রেনেডে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট।