মুজিব মাসুদ : (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫) ঢাকা : যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের বেকেনহাম আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন আরেক বাঙালী কন্যা মেরিনা মাসুমা আহমেদ। পার্টির মোট ৪ জন প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি এই আসনে নির্বাচন করার টিকিট পান। এই আসনে বর্তমানে এমপি হিসাবে আছেন ক্ষমতাসিন কনজারভেটিভ পার্টি। শতভাগ বৃটিশ অধ্যুষিত আসন হলেও নির্বাচনে মেরিনা জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদী। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিক দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির হয়ে এই আসনে কাজ করছেন। গত ১৬ ডিসেম্বর তার প্রার্র্থীতা নিশ্চিত হয়। আগামী ৭ মে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এনিয়ে এবারের যুক্তরাস্ট্রের নির্বাচনে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন সাত বাংলাদেশি। এদের মধ্যে পাঁচজন লেবার পার্টি থেকে। একজন কনজারভেটিভ এবং একজন লিবারেল ডেমোক্রেটিস (লিব ডেম) পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। লেবার পার্টির থেকে মনোনয়ন পাওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনই নারী, এর মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি রুশনারা আলী এবং বঙ্গবন্ধুর নাতনী, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন। বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া অন্যরা হলেন- রুপা হক এবং আনওয়ার বাবুল মিয়া। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে লন্ডনের বার্কিংহাম আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মিনা রহমান এবং লিব ডেম থেকে নর্দাম্পটন সাউথ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী।
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের শক্তিশালী ঘাটি হিসাবে পরিচিত বেকেনহাম আসন থেকে মনোনয়ন পেলেও জয়লাভের ব্যাপারে ব্যাপক আত্মবিশ্বাসী মেরিনা। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, গত ৫ বছরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি বেকেনহামের উন্নয়নে কিছুই করেনি। উল্টো ধ্বংস করে দিয়েছে পুরো বৃটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বেকারত্বের হার বেড়েছে। তরুণদের জন্য বৃটেনে এখন ভয়াবহ দৃ:সময় চলছে। পুরো পাবলিক সার্ভিসটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
মেরিনার সরল উক্তি ক্ষমতাসীন পার্টির এই দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে চান আগামী নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে। তাদের ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে বেকেনহামবাসীর উন্নয়ন করতে চান। মোট কথা বৃটেনের রাজনীতির জীবনে তার যত অর্জন সব কিছুই উজার করে দেবেন তার আসনের ৬৫ হাজার ভোটার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য। একই সঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টির দুর্গকেও ভেঙ্গে বেকেনহামকে লেবার পার্টির দুর্গ বানাতে চান।
সম্প্রতি রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস-এ তার বাসভবনে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন, মেরিনা আহমেদ। দীর্ঘ সাক্ষাতকারে তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, ধনী গরিবের বৈষম্যসহ ভেতর বাইরের অনেক অজনা কথা। একই সঙ্গে তুলে ধরেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিব পার্টির দুর্বল জায়গাগুলোও। তুলে ধরেন ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ চিত্র।
মেরিনা গত ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির সদস্য। নারায়নগঞ্জে জন্ম নেয়া মেরিনা আহমদ মা-বাবার সঙ্গে ৬ মাস বয়সে যুক্তরাজ্যে যান। তবে তার বাবা আর বেঁচে নেই। মা মমতাজ বেগম বর্তমানে ঢাকার বনানাীতে বাস করছেন। চার ভাইয়ের সঙ্গে মেরিনা লন্ডনে বসবাস করেন। মেরিনা পাবনার কৃতি সন্তান ডা. ইমরুল কায়েসকে বিয়ে করেন। এই দম্পত্তির রেবেকা (১৫) এবং এলিজা (৬) নামে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
পার্টির বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া মেরিনা তৃণমুল থেকে উঠে আসেন মুল রাজনীতিতে। এরই মধ্যে কিছু সময় তিনি বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্যও কাজ করেছেন। দেশের পথ শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য ও ক্ষমতায়নের পেছনেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে। সেভ দ্যা চিলড্রেনের অর্থায়নে একটি উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার চাকরীর সুবাদে তিনি বাংলাদেশে সেবামুলক এ কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। মালিবাগস্থ মৌচাক রেলগেটে অবস্থিত ঢাকা কমিউনিটি হাসাপাতালের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে চাকরী করেছেন।
মেরিনা বলেন, ‘কোন ধরনের বৈষম্যই আমি পছন্দ করিনা। একদম ছোট বেলা থেকেই এটা আমি শিখেছি। মেরিনা বলেন, “আমি এলাকার সকল শিশুদের জন্য একটি বাস্তব স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে চাই এবং পেনশনাররা যাতে একটি মর্যাদাশীল জীবন পান সে লক্ষ্যেও কাজ করতে চাই।” মেরিনা বলেন, পশ্চিম সাসেক্সে অণুষ্ঠিত কম্পিউটার ইজি রাইটিং প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে তিনি একটি কম্পিউটার পেয়েছিলেন। বাংলাদশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তিনি ওই কম্পিউটারটি বিক্রি করে তহবিল গঠন করেন।
তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী মেরিনা ইউনিভার্সিটি অফ সারে থেকে ইংরেজি ও ইতিহাসে স্নাতক, সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা নেন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কেবিনেট অফিসে কাজ করছেন। ১৯৮০ সালে তিনি বৃটিশ এয়ারওয়েজে স্বেচ্চাসেবক হিসাবে কাজ করেছেন। দুই সন্তানের জননী মেরিনা একজন ব্যারিস্টার। ক্রাউন প্রসিকিউশন টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একটি স্কুলের প্যারেন্ট গভর্নর এবং তার নিজ আসনের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
জানতে চাইলে মেরিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ আমার হƒদপিন্ড। দেশ ও জনগনের ব্যাপারে আমি গভীরভাবে নজর রাখছি। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। এ দিবসে আমার প্রার্থীতা নিশ্চিত হওয়ায় আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। আমি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশি কমিউনিটির ইস্যুগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের কীভাবে সম্মান করতে হয়, তা আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি। তিনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে নিজেকে সম্মানিত বোধ করতেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য আমি আামার দুই সন্তানের কাছ থেকেও তাদের অনুমতি নিয়েছি।