‘বিশাল সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে বীমা খাতের জন্য’-মোহাম্মদ সাঈদুল আমিন

আদম মালেক :  বিশাল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে ব্যাপক পরিসরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এক বিশাল সম্ভাবনা বীমাখাতের জন্য অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করছেন মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাঈদুল আমিন। অনলাইন পোর্টালের সংগে একান্ত সাক্ষাতকারে বীমা শিল্পের চলমান অবস্থা, সংকট এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা বলেন তিনি। আলোচনা হয় দেশের অন্যতম বীমা প্রতিষ্ঠান মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর কর্মকান্ড নিয়ে। পুরো সময় সাথে ছিলেন সিনিয়র রিপোর্টার –আদম মালেক

প্রশ্ন : কেমন চলছে বিমা খাত?

সাঈদুল আমিন : ব্যাংক যা করার করে ফেলছে কিন্তু বীমার জন্য বিশাল একটি ক্ষেত্র পড়ে আছে। সুইজারল্যান্ডে জনপ্রতি ২০টিরও বেশী বীমা কোম্পানী আছে। অথচ আমরা ১০ শতাংশ জনবলকে বীমার আওতায় আনতে পারি নি। এ কারণে ব্যাংকের চেয়ে বীমার জন্য অনেক বড় সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। ব্যাংকে টাকা থাকলে তা সব সময় বিনিয়োগে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, আমানতকারী যে কোনো সময় তাঁর টাকা তুলে নিতে পারে। কিন্তু বীমা কোম্পানি থেকে যখন-তখন টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে বীমা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে যেতে সক্ষম। এভাবে বীমার মাধ্যমে একটি বড় পুঁজি গঠনের সুযোগ আছে। তাকে কাজে লাগিয়ে এ খাতকে সমৃদ্ধকরণসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। একারণে বলছি, ব্যাংকের তুলনায় বিমার জন্য বিশাল সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। আর এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই গ্রাহক সেবায় আরও বেশি অগ্রসর হতে কাজ করছে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

প্রশ্ন : বীমা খাতের চ্যালেঞ্জ কি?

সাঈদুল আমিন : বীমা খাতের সম্ভাবনার পাশাপাশি প্রতিকূলতার বিষয়ও অবতারণা করেন তিনি। বলেন, এখানে অনেক কিছুই চ্যালেঞ্জিং। বহুমুখি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বীমাখাত। বিশেষ করে মানুষের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশী। আস্থা অর্জন করতে গেলে কোম্পানীগুলোকে যেভাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা দরকার, সে জায়গাটায় আমাদের কাজ করতে হবে। আস্থার জায়গায় আমাদের পৌঁছাতে হবে। কিছু কিছু কোম্পানীর কার্যক্রমের কারণে এক্ষেত্রে আমরা বাধাগ্রস্থ হচ্ছি। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমরা যারা ভালো কাজ করছি, তাদের মাধ্যমে আস্থা ফিরে আসবে। মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স চায় সেবার মধ্যদিয়ে গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে এনে কোটি মানুষকে বীমা পরিবারের সঙ্গে আবদ্ধ করতে। আলোচনা করেন কোভিডের প্রভাব নিয়ে। এই বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনে করেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীমাখাত। বিশেষ করে জীবন বীমা খাত। যে কারণে আমরা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে, করোনার মধ্যেও মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর বেতনভাতা সুযোগ সুবিধা সচল রাখতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচের তুলনায় ব্যবসা আসেনি। যে কারণে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। তবে ভালো কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত আছে, সমস্যার উত্তরণ

ঘটবে। প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তাঁর পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ। সাইদুল আমিন বলেন, সম্মিলিতভাবে সবাইকে স্বচ্ছতার দিকে আসতে হবে। কোম্পানীগুলিকেও স্বচ্ছতার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের জন্য উৎসাহজরুরী। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরে বীমার অগ্রগতির জন্য তৎপরতা অতি প্রয়োজনীয়। আবার যারা মনিটরিং করছে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশা তাদের কাছেও রয়েছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে স্বচ্ছতা আসবেই। শতভাগস্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে গ্রাহক সেবা দিতে বদ্ধপরিকর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি সমাধানের দিকেনির্দেশনাও উঠে আসে সাঈদুল আমিনের আলাপচারিতায়। অর্থবাংলাডটকমকে তিনি আরো বলেন, আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনতে না পারার কারণে গ্রাহকরা
যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি কর্মকর্তা কর্মচারীরাও ভালো সুযোগ সুবিধা পায় না। আর ভালো সুবিধা না পেলে দক্ষ জনশক্তি আসে না। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে যে বেতন কাঠামো আছে সেটা যদি আমরা বীমা খাতে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে এখানেও দক্ষ জনশক্তির সংযুক্তি ঘটানো সম্ভব।

প্রশ্ন : বীমা কাতে শিক্ষার গুরুত্ব কি?

সাঈদুল আমিন :  শিক্ষা খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্সের ওপর পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ব্যাংকিংয়ের দিকে। ইন্স্যুরেন্সের প্রতি নয়। এর কারণ হলো ব্যাংকে চাকরি হলে সে ভালো বেতন পায়। আসলে ব্যবসার আকার বড় করতে না পারার কারণে আমরা কর্মীদের ভালো বেতন দিতে পারছি না। ভালো বেতন দিতে না পারলে ভালো কর্মী আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে মার্কেন্টাইল পরিবার যেমন একদিকে শিক্ষিত তরুণ সমাজকে বীমা পেশায় সম্পৃক্ত করতে কাজ করছে, তেমনি সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীমা খাতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে।

প্রশ্ন : বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রসঙ্গে কিছু বলেন।

সাঈদুল আমিন : আইডিআরএর এক সিদ্ধান্তে নতুন করে সমস্যা দেখছেন সাঈদুল আমিন। বীমা কোম্পানীর বোর্ডে আইডিআর এর প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টিকে অনুচিত মনে করেন তিনি। তাঁর মতামত স্পষ্ট। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন- কোম্পানীর উদ্যোক্তারা কোম্পানীর জন্য কাজ করছে সেখানে আইডিআরএ’র লোক কেন থাকবে। আমি মনে করি এটা ঠিক না। তারা আমাদের বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। কোনো কোনো বোর্ডে অনিয়ম থাকতে পারে কিন্তু স্বচ্ছতার সঙ্গে যারা কাজ করছে তাদেরকে উৎসাহিত করা দরকার। ‘আপনারা এগিয়ে যান আমরা আছি আপনাদের সাথে’-এমন উৎসাহই আমরা আইডিআরএ থেকে আশা করি, বললেন তিনি।

প্রশ্ন :বীমা দিবস পালনে বিমা খাতে কি ধরনের প্রভাব ফেলে ?

সাঈদুল আমিন : রাষ্ট্রিয়ভাবে বীমা দিবস পালন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই বিমা ব্যক্তিত্ব। তিনি মনে করেন, সারাদেশে প্রচারণা
বাড়ছে। বীমার প্রতি মানুষের আন্তরিকতা বাড়ছে। সরকারের এ উদ্যোগের কারণে সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ের মানুষ সচেতন হচ্ছে। বীমার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা থাকবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বীমার বার্তা পৌঁছানোর জন্য। ঐ জায়গাগুলোতে বীমা বাধ্যতামূলক করে দেয়া দরকার। কিছু জায়গায় কাজ করেছে সরকার। আরও কিছু জায়গায় যদি কাজ করা যায় তাহলে সুফল আরও আসবে। একটু হতাশ কন্ঠে বললেন, ‘বীমা দিবসে আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করি, যে প্রত্যাশা করি, যে অঙ্গীকার করি তাতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’

প্রশ্ন : বিমা খাতে কোভিডের প্রভাব কেমন পড়েছে?

সাঈদুল আমিন : কোভিডের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরী হয়েছে। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করে দেয়া যায়। সরকার সহযোগিতা করতে পারে। কিছু অনুদান দিতে পারে। এতে করে মানুষ আজকে যারা চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে তাঁরা চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারে। পরিবহন খাতেও বীমা বাধ্যতামূলক করা যায়। রাস্তায় গাড়িতে চলতে গিয়ে আহত হলে পরিবহন বীমা থাকলে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে সরকারী সহযোগীতা দরকার। এতে দেশ উপকৃত হবে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলোও ভালো জায়গায় যেতে পারবে।
পরিবহন ও ভ্রমনের ওপর বীমা বাধ্যতামূলক করা যায়। সরকার কোভিডের জন্য টিকা জন্য দিচ্ছে। সেখানে আর একটু এগিয়ে সামান্য প্রিমিয়াম যোগ করলে টিকাগ্রহীতা বিনা মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পায়। এই সময়ে যার সার্মথ্য আছে তারা চিকিৎসা পাচ্ছে, আইসিও সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু যার টাকা নেই যারা দরিদ্র তারাতো এ সুবিধা পায় না। কিন্তু বীমা থাকলে তারা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা পেতো। কারণ, হাসপাতালগুলো বীমা কোম্পানীর কাছ থেকে খরচ পাবে। ইউরোপে চিকিৎসা সুবিধা সম্পূর্ণ বীমা কোম্পানী বহন করে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু হয়েছে। কিন্তু এটা খুব ছোটো পরিসরে। এ বীমা আরও বড় পরিসরে হওয়া দরকার। অভিভাক মারা গেলে টাকার অভাবে বা অন্য কোনো কারণে লেখাপড়া যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সে জন্য শিক্ষা বীমা দরকার। উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা ইন্স্যুরেন্স দিতে পারি। শিক্ষার জন্য সে যত উপরে যাবে ইন্স্যুরেন্স থাকলে সে বীমা কোম্পানীর কাছ থেকে তত সহযোগিতা পাবে। আর্থিক সহযোগিত না থাকলে উচ্চ শিক্ষায় অনেকে ঝরে যায়। এখানে আর্থিক বিষয় জড়িত। এ জায়গাগুলোয় কাজ করা যায়। এছাড়া আমাদের কলকারখানায় যারা কাজ করে যদি তাদের বীমার আওতায় আনা যায় তাহলে তারা সুরক্ষা পারে। বীমা সমৃদ্ধ হবে। সরকারও উপকৃত হবে। সরকার যে রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট করে সেটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বীমা থাকলে ক্ষতিপূরণ পাবে। তখন সড়কের কাজে বীমা কোম্পানীও নজরদারি করবে যাতে কাজের মান খারাপ না হয়। সেখানে অনেক জায়গায় বীমাকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। এভাবেই দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব।

প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বীমার প্রতি উৎসাহ ও আন্তুরিকতা রয়েছে- এতো কিছুর পর সুফল কতটুকু পাচ্ছেন?
সাঈদুল আমিন : এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধীরগতিতে হচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি নানা কারণে। সরকারের চেষ্টা আছে। আন্তরিকতা আছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ পেশায় ছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা আমরা পচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় সমন্বয়হীনতার কারণে পিছিয়ে আছি আমরা। এখানে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বীমার উন্নয়নে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।

সবশেষ তিনি আবারো বললেন, তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠান নিয়ে। জানালেন, ‘মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসায় আগামী সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে চায় মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.