ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

01-megaquake-dhaka.adapt_.590.1বাংলাদেশের যে ভূ-গাঠনিক অবস্থান সেখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে একদল গবেষক সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, ওই ভূমিকম্প ৯ মাত্রায় আঘাত হানতে পারে। এর ফলে এ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষ বিপদের মুখে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গঠিত ওই গবেষণা দলটি এ তথ্য পেয়েছেন। তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি গত সোমবার নেচার জিওসায়েন্স প্রকাশ করেছে।

এদিকে নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, খুব দ্রুতই ভূমিকম্পটি হবে না। তবে তা অবশ্যই হবে। ভূ-গাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চাপ দিয়ে থাকার কারণে সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ ও গবেষণা দলের প্রধান মাইকেল স্টেকলার রয়টার্সকে বলেন, ঠিক হিসেবে করে বলা যাবে না কবে হবে সেই ভূমিকম্পটি। এর জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করা দরকার আরও।

গবেষক দল বলছে, গত ৪০০ বছর ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা দুটি টেকটোনিক প্লেটের ‘সাবডাকশন জোন’ টান টান (স্ট্রেইন) অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এই শক্তি মুক্ত হলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। আগে ভাবা হতো, এ অঞ্চলের ‘প্লেটের বাউন্ডারি’ আনুভূমিকভাবে কাছের পৃষ্ঠদেশের ওপর দিয়ে পিছলে যাচ্ছিল। এটি হলে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হতো না। তবে প্রকৃত অবস্থা এমনটি নয়। সাবডাকশন জোনের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে এ কারণে ভূমিকম্প হয়েছিল।

ছবি: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।
ছবি: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে ভূ-গাঠনিক অবস্থানে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, ইতোমধ্যে সেখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের তীব্রতা হতে পারে ভয়াবহ। আর এটি হলে পুরোপুরি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে রাজধানী ঢাকা।

বাংলাদেশ ভূতত্ত্ব জরিপ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, যাদের গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে, তারা তথ্যউপাত্ত কীভাবে সংগ্রহ করেছে তা আমার জানা নেই। আজ বুধবার আমরা দলটির সঙ্গে বসব। তবে এটি ঠিক যে, বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে।

ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তার ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বসবাস।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মতো কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি।

২০০৪ সালে যে ফল্ট লাইনের ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। সেই একই ফল্ট লাইনে নতুন এই ভূমিকম্পের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গাঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা টেকটোনিক প্লেটের ওই সরে যাওয়া জিপিএসের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন ২০০৩ সাল থেকে। সেই তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের প্লেট মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের প্লেটকে বছরে ৪৬ মিলিমিটার করে ঠেলছে।

মাইকেল স্টেকলার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসকে বলেন, এমন একটি বিপদ যে ঘনিয়ে আসছে সে ধারণা গবেষকদের কারো কারো মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য বা মডেল এতদিন হাতে ছিল না।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.