গুলশান হামলায় নারীদের যেভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা

tarushi newউনিশ বছরের তরুণী তারুশি জৈন। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত ১৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ছিলেন উচ্ছল এই ভারতীয় তরুণী। লাশের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, হলি আর্টিসান বেকারিতে সবচেয়ে নিষ্ঠুরভাবে তাকেই হত্যা করেছে জঙ্গিরা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যখম করা হয়েছে তাকে। তার শরীরজুড়ে ৩০-৪০টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথার একপাশে কোপানো হয়েছে। দু’হাতেও রয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। পেটে-বুকেও কোপানো হয়। দৈনিক সমকালে প্রকাশিত সাহাদাত হোসেন পরশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত তথ্য।

আঘাতের সংখ্যা ও ধরন বলছিল, কতটা হিংস্র ও বর্বর ছিল হামলাকারীরা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্যানেলের প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, শুধু তারুশি নন, গুলশানের ঘটনায় নিহত ১০ নারীর ওপরই সবচেয়ে বেশি বর্বর হামলা চালায় জঙ্গিরা। আলামত দেখে মনে হয়, কোনো কারণে নারীদের ওপর বেশি ক্ষুব্ধ ছিল তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাগত সন্তানের কথা বলে প্রাণভিক্ষা চেয়েও ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ইতালির এক নারী জঙ্গিদের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাননি।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, যেভাবে বর্বর কায়দায় পাঁচ জঙ্গি ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে, তা বর্ণনাতীত। প্রতিদিনই খুনোখুনির ঘটনা-সংক্রান্ত অনেক মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করছেন তারা। তবে এমন নিষ্ঠুর হামলার চিহ্ন তারা কদাচিতই দেখেছেন। চিকিৎসকদের ধারণা, জড়িত জঙ্গিরা বাড়তি ‘এনার্জিদায়ক’ কোনো ওষুধ সেবন করতে পারে। এতে তারা আরও অমানবিক হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র পাঁচ তরুণ ২০ জনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। জঙ্গিদের শরীরে এ ধরনের কোনো ওষুধের অস্তিত্ব ছিল কি-না, তা পরীক্ষার জন্য তিন ধরনের আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই নমুনার ভিসেরা পরীক্ষা করা হবে। ভিসেরার প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে। তার জন্য আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান তারা।

গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নিজ কক্ষে বসে ডা. সোহেল মাহমুদ যখন ময়নাতদন্তের ব্যাপারে বিস্তারিত বলছিলেন, তখন তার চোখও ছলছল করছিল। নিহত ১৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে সাতজনের শরীর থেকে আটটি বুলেট চিকিৎসকরা উদ্ধার করেন। তার মধ্যে একজনের শরীরে দুটি বুলেট ছিল। কারও শরীর ভেদ করে বুলেট বেরিয়ে গেছে। একজন জাপানি নাগরিকের মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। সাত বিদেশি নাগরিককে পেছন দিক থেকে মাথায় গুলি করা হয়। এক বিদেশি বাদে সবার শরীরে কুপিয়ে আহত করার চিহ্ন রয়েছে। অনেকের একই জায়গায় বারবার কোপানো হয়েছে। এক বিদেশি নাগরিকের গলা, ঘাড়, থুতনি ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।

বাংলাদেশি নাগরিক ফারাজ হোসেনের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার হাতে ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত আরও দুই বাংলাদেশি নারী ইশরাত আখন্দ ও অবিন্তা কবিরের শরীরে কোপানোর একাধিক চিহ্ন ও মাথায় জখম ছিল।

নিহত ছয় জঙ্গির সবার শরীরে ছিল গুলির চিহ্ন। তাদের মধ্যে তিনজনের শরীরে আবার বোমার স্পিল্গন্টার পাওয়া গেছে। এক জঙ্গির গুলি শরীর ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে যায়।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.