স্বর্ণ চোরাচালান : শাহজালাল পার করতে মাসিক চুক্তি ৫ লাখ !

Hafizursm_banglanews24_963487105ঢাকা: (ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫) প্রতিমাসে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশের বাইরে থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা স্বর্ণ হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোপনে বের করে দেয় সিভিল এভিয়েশনের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একাধিক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে মাসিক এই চুক্তিতে নিরাপদে অবৈধভাবে নিয়ে আসা স্বর্ণ বিমান বন্দরের বাইরে বের করে দেয়।

সিভিল এভিয়েশনের জুনিয়র প্রটোকল অফিসার হাফিজুর রহমানকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দীর্ঘ ১০ মাস আত্মগোপনে থাকার পর ১৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে।

আটক হাফিজুর রহমান গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, প্রতিমাসে বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ বাইরে বের করে দিতে তিনি কয়েকটি চক্রের কাছ থেকে পাঁচ লাখ করে টাকা নিতেন। ১৩ বছরের চাকরি জীবনে অসংখ্যবার তিনি বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ বাইরে বের করে দিয়েছেন।

আরো অনেক কর্মচারী পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে স্বর্ণ বাইরে বের করে দেওয়ার কাজ করেন বলেও জানান তিনি।

হাফিজুরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে, জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ।

তিনি বলেন, গত বছরের ২০ এপ্রিল ২০ কেজি স্বর্ণের বারসহ বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা হোসেন আলীর স্ত্রী শাহনাজ হোসেন, তার কন্যা তানজিলা হোসেন, মেয়ের জামাই নাভিল ইবনে ইকরাম এবং সিভিল এভিয়েশনের তথ্য সহকারী মোবারক হোসেনকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

ওই ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এমাদুল হক বিমানবন্দর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে প্রটোকল অফিসার হাফিজুরকেও আসামি করা হয়।

দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস পলাতক থাকার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিরপুর সেনপাড়া থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এ মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হোসেন চেয়ারম্যানকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, স্বর্ণ পাচারকারীরা বিমানবন্দরে যেসব কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্বর্ণ পাচার করে, এর মধ্যে হাফিজুর অন্যতম। গত বছর এপ্রিল মাসে ২০ কেজি স্বর্ণের বার উদ্ধার ও মামলার পর তার নাম উঠে আসে, আর এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে হাফিজুর রাজধানীর মিরপুরে অবস্থান করছেন। সঙ্গে সঙ্গে ১৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

স্বর্ণ পাচার করে দিয়ে বাড্ডার হোসেন চেয়ারম্যানের এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাসিক পাঁচ লাখ টাকা নিতেন তিনি। এই সিন্ডিকেটও অসংখ্যবার স্বর্ণ পাচার করেছে বলে গোয়েন্দাদের জানান হাফিজুর।

তবে কতদিন ধরে হাফিজুর এই কাজ করছেন এ বিষয়ে সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেনি তিনি।

স্বর্ণ পাচারকারী সিন্ডিকেট ও পাচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে গোয়েন্দাদের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য থাকলেও তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করেনি গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ২০ এপ্রিল এই চক্রটি সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণগুলো নিয়ে আসে। ওই দেশে থাকাবস্থায় তারা হাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ সময় হাফিজুর তাদের জানান, ওই সময় তার ডিউটি ছিল না। তবে সমস্যা হবে না মোবারক নামের সিভিল এভিয়েশনের আরেক কর্মকর্তা তাদের পার হতে সাহায্য করবেন। তারা সিঙ্গাপুর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৬ ফ্লাইটে উঠার পর বাংলাদেশের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ বিষয়টি টের পায়। এরপর শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট থেকে নামার পর গ্রিন চ্যানেলে পৌঁছালে সেখান থেকেই তাদের চারজনকে আটক করা হয়। তবে ওই চারজন আটক হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই গ্রেফতার এড়াতে হাফিজুর আত্মগোপন করেন।

মঞ্জুর মোর্শেদ আরো বলেন, শুধু একটি সিন্ডিকেট নয়, কয়েকটি সিন্ডিকেট ও বিমানবন্দরের কোন কোন কর্মকর্তারা কত টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ বের করে দেন, সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন অনেকের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা এসব কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা নজরদারীর মধ্যে এনেছি। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই শেষে অভিযান চালানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.