ধর্ম অবমাননা আইন: যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শুনানিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

co-chairmen-addreবিশ্বজুড়ে ধর্ম অবমাননা আইনের প্রয়োগের ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হুমকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এক শুনানিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়েছে।

টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ‘ধর্ম-অবমাননা আইন এবং রাষ্ট্র ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সেন্সরশিপ: মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বৈশ্বিক হুমকি যাচাই’ শিরোনামে ওই শুনানি হয়।

ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলের রেবার্ন হাউজে শুনানির উদ্বোধনী বক্তব্যে আয়োজক সংস্থার কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান যোসেফ আর পিটস ও কংগ্রেসম্যান জেমস পি ম্যাকগোভার্ন ঢাকায় সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ তোলেন।

এরপর আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কমিশনের সভাপতি রেভারেন্ড টমাস জে রিজ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমিশনের সামনে প্রামাণ্য বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সৌদি আরব, তুরস্ক, বুরুন্ডি, সার্বিয়া, ইয়েমেন, মিশর, মেসিডোনিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ‘ধর্ম অবমাননা’র অজুহাতে বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড ও নৃশংসতা চালানো হচ্ছে, যা মানবতাকে বিচলিত করে তুলেছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশে গত দুই বছরে ধর্মীয় লেবাসে সন্ত্রাসীরা লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতা, ব্লগার, ধর্ম-নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মানুষদের নৃশংসভাবে হত্যা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ নিয়ে প্রেক্ষিত পর্যালোচনায় টমাস রিজ বলেন, “মানুষকে হয়রানি ও বন্দি করতে বাংলাদেশ সরকার দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারা ও ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৯ (এ/এফ) ধারাসহ ধর্ম অবমাননার আইন প্রয়োগ করছে। বাংলাদেশের কিছু কিছু রাজনীতিক ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক ভাষা ব্যবহার করছেন এবং এমন কর্মকাণ্ড করছেন যাতে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা সাহস পেয়ে ধর্মীয় সম্প্রদায় ও ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে।”

অবশ্য গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের এক লাখের বেশি ইমামের স্বাক্ষরিত ধর্মের নামে সন্ত্রাসের নিন্দামূলক ফতোয়া জারির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি।

টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনের লগো। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্লগার, লেখক, বুদ্ধিজীবী, অসাম্প্রদায়িক চেতনার সংগঠক, ইমাম, পুরোহিত, ধর্মযাজক, বৌদ্ধ-ভিক্ষুসহ প্রকাশক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হত্যার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সেগুলোতে আইএস, ভারতীয় উপ-মহাদেশভিত্তিক আল কায়েদা, আনসার আল ইসলাম ও আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন দায় স্বীকার করেছে বলে শুনানিতে বলেন তিনি।
চলতি মাসের প্রথম দিনে ঢাকার গুলশানের রেস্তোঁরায় জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে ২০১৩ সালের পর ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি; কিশোরগঞ্জের শোয়ালাকিয়ায় ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গও আনেন।

শুনানিতে তিনটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ ডেভিড এন স্যাপরস্টিন, ফ্রিডম হাউজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেনিসা এল টাকার।

প্যানেল আলোচনায় আরও ছিলেন হাডসন ইন্সটিটিউট সেন্টার ফর রিলিজিয়াস ফ্রিডমের পরিচালক নীনা শিয়া, পেন আমেরিকার ফ্রি এক্সপ্রেশন প্রোগ্রামের পরিচালক ড. ক্যারিন কারলেকার, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-এর অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর ড. কোর্টনি সি রাডসে ও সিরিয়ান-ক্রিশ্চিয়ান ফর পিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ড. ওয়ায়েল আলেজি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.