প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে যখন তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তখন প্রথম দিকে তাকে ও তার সরকারকে টিজ করা হতো। অথচ এখন দেশ একটি সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় ইভটিজিংয়ের মতো আমাদের ‘ডিজিটাল’ টিজিং শুনতে হতো।
রাজধানীর বিজয় সরণীস্থ নভোথিয়েটার সম্মেলন কক্ষে উন্নয়ন উদ্ভাবন বাংলাদেশ-২০১৬ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারনা থেকে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আমাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি আমার ছেলে জয়ই আমাদেরকে উপহার দিয়েছে। তারই পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করি। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছি। এখান থেকে ২০০ প্রকার ই-সেবা দেওয়া হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ব্যাপকভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। দেশের সকল উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কানেকটিভিটি চালু করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ দ্রুত ও সহজতর হয়েছে।
ইন্টারনেট ডেনসিটি ও সাবমেরিন ক্যাবলের ক্যাপাসিটি বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে তথ্য-প্রযুক্তি বান্ধব নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ৯৯ ভাগ এলাকা এখন মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। দেশে ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ৪-জি প্রযুক্তিও অচিরেই চালু করা হবে।
সারা দেশে ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট নিয়ে ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও ১ হাজার ৫০০ এর বেশি সরকারি ফরম নিয়ে চালু করা হয়েছে ফর্ম পোর্টাল।
‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ ও ‘ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি’ নামে দুটি মডেল উদ্ভাবন করা হয়েছে যার মাধ্যমে দেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৪ হাজার ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুবিধা পাচ্ছে ১০ হাজার বিষয়ে ১ লক্ষ পৃষ্ঠার কনটেন্ট নিয়ে জাতীয় ই-তথ্যকোষ তৈরি করা হয়েছে।
৩০০টি পাঠ্যপুস্তক ১০০টির বেশি সহায়ক বই ই-বুকে রূপান্তর করা, ‘মুক্তপাঠ’ নামে বাংলা ভাষায় নির্মিত একটি উন্মুক্ত ই-লার্নিং প্লাটফর্ম চালু করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি ‘একসেসিবল মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক’ এর কথা তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২০টি মন্ত্রণালয়, ৪টি অধিদপ্তর এবং ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৭টি বিভাগীয় কমিশনার অফিসে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু করা, ডিজিটাল মোবাইল কোর্ট সিস্টেম চালু করা, দেশের সকল ভূমি রেকর্ড (খতিয়ান) ডিজিটাল করার কাজ চলছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
টেলিমেডিসিন, ‘কৃষি কলসেন্টার’ ডিজিটাল পুর্জির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৪০০টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। ১৮ লক্ষ নাগরিক ই-টিআইএন ব্যবহার করছে। ১ হাজার ৩৩৩টি পোস্ট অফিসে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, ২ হাজার ৭৫০টি পোস্ট অফিস ও সাব-পোস্ট অফিসে ইলেক্ট্রনিক মানি অর্ডার চালু করা হয়েছে। প্রায় ৮ হাজার ৫০০ পোস্ট ই-সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
ইলেকট্রনিক চিপ সম্বলিত স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড, মোটরযানের ট্যাক্স ও ফি অনলাইনে প্রদান, রেলওয়েতে ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থার কথাও উঠে আসে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক এই বক্তব্যে।
বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, অনলাইনে হজ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবা সরকার এখন অনলাইনেই দিচ্ছে, বলেন শেখ হাসিনা।