সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর একটি কনডম। নিরাপদ যৌন-জীবনের জন্য পুরুষদের কনডম ব্যবহারের পক্ষে ব্যাপক প্রচার থাকলেও অনেক পুরুষই এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এমন পুরুষদের জন্য একটা বিকল্প বের করার উপায় খোঁজা হচ্ছিল অনেকদিন থেকেই। দীর্ঘ গবেষণার পর এ বিষয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা। জন্মনিয়ন্ত্রণে আসছে পুরুষদের বড়ি। খবর ইন্দো এশিয়ান নিউজের।
গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে নারীর পাশাপাশি পুরুষদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও সমাজকর্মীরা। কিন্তু কোনো পুরুষ কনডম ব্যবহার করতে না চাইলে বাধ্য হয়ে নারীকেই নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে হয় কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হয়। কিন্তু পুরুষদের সেসব ঝক্কি পোহাতে হয় না। গবেষকেরা মনে করছেন, পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি আবিষ্কার করা গেলে দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে পুরুষেরা আরেক ধাপ এগোতে পারেন। পুরুষদের জন্য এমন দুটো প্রকল্পে গবেষণায় সাফল্য আসার পথে।
যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন-জীববিদ্যার গবেষক জোসেফ টাশ এমন একটা গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুরুষের শুক্রাণুর উর্বরতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তিনি। টাশ বলেন,‘শুক্রাণুর উর্বরতা না থাকলে ডিম্বাণুর নিষিক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
‘এইচ টু-গামেনডাজোল’ নিয়ে গবেষণায় শুক্রাণুর পূর্ণ বিকাশ রহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে টাশের গবেষণা দল। সাধারণভাবে শুক্রাশয়ের মধ্যেই শুক্রাণুগুলোর একটা লেজ ও মাথা গজাতে থাকে। কিন্তু এই উপাদান দিয়ে তৈরি বড়ি খেলে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত শুক্রাণু পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হতে পারবে না। ফলে যৌন-মিলন সত্ত্বেও নারীর গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকবে না। ২০০১ সাল থেকেই এই প্রকল্পে কাজ করছেন এই মার্কিন বিজ্ঞানী।
জন্মনিয়ন্ত্রণে পুরুষের জন্য আরেকটি সম্ভাব্য উপাদন হলো ‘জেকিউ-ওয়ান’। এই উপদান পুরুষ শরীরকে শুক্রাণু উৎপাদনের কথা ভুলিয়ে রাখবে! হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডানা-ফারবার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের জে ব্রাডনার এবং গবেষক দল ‘জেকিউ-ওয়ান’ ব্যবহার করে ক্যানসার কোষের নির্দিষ্ট একটা প্রোটিনের বৃদ্ধি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। বিআরডিটি নামে শুক্রাশয়ের ওই বিশেষ প্রোটিন শুক্রাণু উৎপাদনে সম্পৃক্ত থাকে। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন এই গবেষকেরা।
ইঁদুরের ওপর ‘জেকিউ-ওয়ান’-এর পরীক্ষা চালিয়ে সফলও হয়েছেন গবেষকেরা। তবে, এই উপদানে তৈরি ওষুধ কতোট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হবে সেই গবেষণায় আরও অনেক দূর যেতে হবে বিজ্ঞানীদের। তারপর হবে মানুষের ওপর এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এইসব ধাপ পেরিয়ে বাজারে পুরুষদের জন্য এমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি আসতে হয়তো আরও অনেকদিনই অপেক্ষা করতে হতে পারে।