জনশক্তি রফতানিতে জঙ্গি হামলার প্রভাব পড়েনি

downloadদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও বিদেশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনশক্তি রফতানি ও প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই উগ্রবাদী শক্তি ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালাচ্ছে। এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের জন্য জঙ্গিবাদ জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করছেন। যতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বাংলাদেশ পথ হারাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করছে তারা ইসলামের শত্রু। এই শত্রুদের জায়গা বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।

বিদেশগামীদের চট্টগ্রাম থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বিএসসি এসব কথা বলেন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মন্ত্রী জানান, বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে প্রবাসীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, দুর্ভোগে না পড়েন সে লক্ষ্যে নিজ নিজ জেলা থেকেই ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে যারা বিদেশ যাবেন তারা চট্টগ্রামে বসেই বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড গ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে সিলেট ও কুমিল্লাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় এ কার্যক্রম চালু করা হবে। এতে করে বিদেশগামীদের আর ঢাকা-মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। অর্থ ও সময় ব্যয় এবং দালালের খপ্পরে পড়তে হবে না। প্রবাসীরা বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে যে অবদান রাখছেন সরকারও তাদের সেভাবে সুযোগ-সুবিধা দিতে চায়।

সভায় মন্ত্রী বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড তুলে দেন ওমানগামী সাত বাংলাদেশীর হাতে। চট্টগ্রাম থেকেই বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সরকারের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বিদেশ থেকে আসা অসুস্থ রোগী বা লাশ বহনের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সও দেয়া হয়। চট্টগ্রাম শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার জহিরুল আলম মজুমদারের হাতে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে বিদেশ মারা যাওয়া বা নিহত ৩ থেকে ৪ জনের লাশ আসে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে। অসুস্থ হয়েও অনেকে ফিরে আসেন। অসুস্থ রোগীরাও দুর্ভোগে পড়েন। এ সমস্যা সমাধানেই দেয়া হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া বিদেশ নিহত ও মৃত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের ২০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী শ্রমিকের পরিবারের হাতে।

দায়িত্ব নেয়ার পর বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, গত বছর যেখানে ৫ লাখ কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন সেখানে এ বছর তা আট লাখ ছাড়িয়ে যাবে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৯৩৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। বিশ্বের ১৬১টি দেশে বর্তমানে এক কোটি কর্মী কর্মরত। যার দশ শতাংশই চট্টগ্রামের। এখন তার মন্ত্রণালয় দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের দিকে তাকিয়ে না থেকে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরই মধ্যে রাশিয়ায় ৪০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, জনবহুল বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি কর্মী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী দেশে তাদের চাকরির সংস্থান করা যাচ্ছে না। ফলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যাচ্ছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে। দক্ষ শ্রমিক না থাকায় বিদেশে গিয়ে নিুমানের কাজ করতে হচ্ছে। বেতন পাচ্ছে কম। এ কারণে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর বেশ জোর দিচ্ছেন তারা। দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার জন্য চট্টগ্রামে একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় এমনকি উপজেলা পর্যায়েও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট গড়ে তোলার উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরিতে সৌদি আরব, আবুধাবি ও দুবাইতেও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রবাসী ও তাদের কয়েকজন সন্তানও বক্তব্য রাখেন। তারা প্রবাসীর সন্তানদের দেশে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা বৃদ্ধি করা, তাদের স্বাস্থ্য ও সম্পদের সুরক্ষা দেয়া এবং বিদেশ থেকে দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে কঠোর পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসা প্রবাসীদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন, জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আহমদ শামীম আলী রেজা বক্তব্য রাখেন। ব্যুরো চট্টগ্রাম অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.