সিটিসেলকে সক্রিয় রাখতে প্রতিবেশি দেশ মায়ানমারের একটি অপারেটরের সঙ্গে গতকাল সোমবার যোগাযোগ করেছেন সিটিসেলের চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। ওই অপারেটরটি গত জানুয়ারিতে সিটিসেল কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং ব্যবসা শুরু করার জন্য ঢাকায় অফিসও নিয়েছিল। কিন্তু সিটিসেলের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত আগ্রহ না থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত তাদের ফিরে যেতে হয়। অবশেষে গতকাল এম মোরশেদ খান নিজ থেকেই সেই অপারেটরটির সাথে যোগাযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, সিটিসেল বন্ধ না করার জন্য গতকাল সোমবার মধ্য রাত পর্যন্ত বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদের সাথে বৈঠক করেছেন সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী এবং চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। তারা শিগগির বকেয়া টাকার কিছু অংশ বিটিআরসির কাছে জমা দেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। বৈঠক পরবর্তী সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে সরকারের রাজস্বগুলো পরিশোধিত হবে এবং সরকারও একটা নতুন বিনিয়োগ পাবে বাংলাদেশে। যেটা সবার জন্য মঙ্গলময়।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের সব নিয়ম মেনেই, সিটিসেলের গ্রাহকরা তাদের সেবা পাবেন, নতুন বিনিয়োগে।’
এদিকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নিব তাদের ব্যাপারে এবং কবে নিব সেটা আমাদের ঠিক করা হয়নি। এজন্য ১৬ তারিখ পর্যন্ত আমরা সময় দিয়েছি। যেসব গ্রাহক তাদের (সিটিসেল) সঙ্গে আছে তারা যেন একটা বিকল্প ব্যবস্থা নেয়।’ তবে সিটিসেল বন্ধের আগেই বিটিআরসির এমন পরামর্শ সাংঘর্ষিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে যদি বন্ধ করে দিতাম তাহলে গ্রাহকরা কোথায় যেত। সেজন্য গ্রাহকদের সময় দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৪ সালে ভিয়েতনামের মোবাইল ফোন অপারেটর মোবিফোন আর্থিক সংকটে থাকা সিটিসেল কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। বিদেশি কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করতে ও অপারেটরটির তৎকালীন অবস্থা দেখতে ঢাকায় এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর আগে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর ভিয়েতটেল বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অপারেটর টেলিটক কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু সেটাও আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে সিটিসেলের মালিকানা বদলের জন্য ২০১৫ সালে কার্লোস স্লিমের মালিকানাধিন দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিষ্ঠান আমেরিকা মোভিলের সাথে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেছিল সিটিসেল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় মেক্সিকো সিটির প্লাজা কারসোতে সরাসরি বৈঠকও হয় কয়েকবার। কিন্তু তারা সব কিছু বিবেচনা করে সিটিসেলের প্রস্তাবনা ফিরিয়ে দেয়। অন্যদিকে মায়ানমারের একটি প্রতিষ্ঠান গত জানুয়ারিতে সিটিসেল কিনতে আগ্রহ দেখালেও তাতে গ্রাহ্য করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে এখন উপায় না পেয়ে নিজে থেকেই মায়ানমারে যোগাযোগ শুরু করেছে সিটিসেল।
এসব ব্যাপারে জানতে সিটিসেলের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স তাসলিম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সিটিসেলের কর্তৃপক্ষ নতুন বিনিয়োগ পেতে চেষ্টা করছেন। বিটিআরসির সাথেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’ সারাদেশে সিটিসেলের মোট ৮৭৬টি টাওয়ারের (বিটিএস) মধ্যে ৭০০টি বন্ধ থাকায় গ্রাহক হারাচ্ছে এবং ১৬ আগস্টের মধ্যে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে চলে যেতে বলেছে। গ্রাহক হারালে ব্যবসা হবে কীভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘গ্রাহক সমস্যার সম্মুখীন না হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। আর ঢাকার বাইরে যেসব এলাকায় বিটিএস বন্ধ রয়েছে সেগুলো এখন পুনরায় চালু করা হচ্ছে’।