বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে চতুর্থ বাহরাইন

490090জনশক্তি রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে থাকা বাহরাইন হঠাৎ করেই তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে ইতিপূর্বে বাংলাদেশ থেকে এত বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়নি। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট জনশক্তির প্রায় সাড়ে আট শতাংশ গেছে বাহরাইনে, যা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি।

এই সময়ে কর্মী যাওয়ার তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব, দ্বিতীয় স্থানে কাতার এবং প্রথম স্থানে বরাবরের মতোই ওমান শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী গিয়েছিল বাহরাইনে, যার সংখ্যা ২৮ হাজার ৪২৬ জন। কিন্তু চলতি বছরের সাত মাসেই মোট কর্মী গেছে ৩৫ হাজার ৭৫৭ জন।

কেন এত কর্মী বাহরাইন যাচ্ছে জানতে চাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (ইমিগ্রেশন) এ কে এম টিপু সুলতান বলেন, ‘বাহরাইনে বেতন ও কাজের পরিবেশ ভালো থাকায় প্রচুর লোক চাকরি নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের ভালো সুনাম থাকায় কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।’

সরকারিভাবে নির্দিষ্ট কোটা না থাকলেও সে দেশে বাংলাদেশি কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে সেই কারণেই কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে আর বাহরাইনে বাংলাদেশি শ্রম উইং বেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, বাহরাইনে দীর্ঘদিন ধরে থাকার পর বিভিন্ন কারণে ৪৩ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের জোর প্রচেষ্টায় ৩৮ হাজার বাংলাদেশি সেখানে পুনরায় বৈধতা পেয়ে কাজ করছে। কর্মীদের সুনাম এই ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

জনশক্তি প্রশিক্ষণ ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেন, বাহরাইনের কাজের পরিবেশ সুযোগ-সুবিধা ইউরোপের দেশগুলোর মতো। আর সাংস্কৃতিক রীতি বাংলাদেশের মতো বলেই কর্মীরা সেখানে বেশ আরামে থাকেন।

সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত বাহরাইনে কর্মী গেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৫১৭ জন। এর মধ্যে ২০০৯ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক ২৮ হাজার ৪২৬ জন কর্মী গিয়েছিল। এরপর থেকে কিছুটা কমতে থাকে কর্মী যাওয়ার হার। ২০১২ সালে এক বছরে কর্মী গিয়েছে ২১ হাজার ৭৭৭ জন, ২০১৩ সালে তা বেড়ে ২৫ হাজার ১৫৫ জন, ২০১৪ সালে তা কমে ২৩ হাজার ৩৭৮ জন, ২০১৫ সালে ২০ হাজার ৭২৭ জন আর সর্বশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে গেছে রেকর্ডসংখ্যক ৩৫ হাজার ৭৫৭ জন। এর আগে এক বছরে এত কর্মী যাওয়ার রেকর্ড নেই।

সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে ১৩ হাজার ৮১০ জন কর্মী রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল ওমান, আর আট হাজার ২৭১ কর্মী রপ্তানি করে কাতার ও সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান দখলে নিয়েছে বাহরাইন। ২০১৬ বছরের শুরু থেকে কাতার কর্মী রপ্তানিতে দ্বিতীয় এবং সৌদি আরব তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছিল। আর সে সময় বাহরাইনের অবস্থান ছিল সপ্তম। জুলাইয়ে আট দিন সরকারি ছুটি থাকার পরও বাহরাইনে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী গিয়ে চমক সৃষ্টি করল।

যে হারে বাহরাইনে কর্মী যাচ্ছে তাতে করে বছর শেষে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে কি না এ প্রশ্নে টিপু সুলতান বলেন, সংখ্যা বেশ ভালো হবে। কিন্তু এরই মধ্যে সৌদি আরবে প্রচুর লোক যাওয়া শুরু হবে ফলে সেই অবস্থান ধরার হয়তো সুযোগ থাকবে না।

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, বাহরাইনে একজন কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে যেতে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে সেই দেশের বসবাসরতরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা তাদের আত্মীয়স্বজনকে বিভিন্ন পেশায় ভিসা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর সেই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা ক্লিনার, শ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে সেখানে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে জনশক্তি রপ্তানিকারক ফ্রেন্ডস মেরিন এজেন্সির কর্ণধার এমদাদ উল্লাহ বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে কর্মীরা বাহরাইন যাচ্ছে। সেখানে রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো ভূমিকা নেই। এ জন্য কত খরচ লাগছে আমরা জানি না।’

উল্লেখ্য, বাহরাইনে প্রচুর লোক যাওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমান সার্ভিস বাড়িয়েছে গালফ এয়ার। এপ্রিল মাস থেকে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চালু করেছে গালফ এয়ার। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানও এই রুটে ফ্লাইট চালাচ্ছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.