ঢাকা: বারবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এক বছরের ব্যবধানে গ্যাসের দাম আবারও বৃদ্ধি পেলে তা জনগণ সইতে পারবে না।
বোরবার (০৭আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর টিসিবি ভবনের অডিটরিয়ামে জিটিসিএল’র গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়ে গণশুনানিতে অংশ নিয়ে তারা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আয়োজিত শুনানিতে বিচারকের আসনে ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য মাকসুদুল হক ও রহমান মুরশেদ। আর প্রস্তাবকারীদের পক্ষে ছিলেন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল)। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব সারওয়ার, পরিচালক (অর্থ) শরিফুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জিটিসিএলের পক্ষ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ ০.১৫৬৫ থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ০.৩৬৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ গ্যাসের দাম .২১ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে সংস্থাটি।
শুনানির শুরুতেই জিটিসিএলকে জেরা করেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) প্রতিনিধি ড. এম সামসুল আলম। তিনি বলেন, এক বছরের মাথায় ট্যারিফ হার পুনর্নিধারণে আইনি সুযোগ নেই। তাই এই আবেদনের আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও অযৌক্তিক বলে মনে হয়। তাহলে দাম বৃদ্ধির এ আবেদন কেন অগ্রহণযোগ্য হবে না? এময় তিনি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত ১৪টি প্রশ্নের ব্যাখা চান জিটিসিএলের কাছে।
এরপর জেরা করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতলুব আহমাদ।
তিনি বলেন, গ্যাসের দাম আর বাড়াবে না। জনগণ বারবার গ্যাসের দাম বাড়নো সইতে পারছে না। যত দূর পারেন সহনীয় পর্যায়ে রাখেন। গ্যাসের দামের কারণে বড় শিল্পগুলো লাস্টিং করছে না, ছোটগুলো কান্নকাটি করছে।
সম্প্রতি দেশে সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে মাতলুব আহমাদ বলেন, দেশের ওপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কারণে দেশের শিল্পখাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে।
তিনি বলেন, গণশুনানির পরেই দেখি দাম বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তবে এবার আমি রেগুলেটারি কমিশনকে অনুরোধ করবো গ্যাসের দাম যেন না বাড়ে। আমরা জিটিসিএলের প্রস্তাব ঘেঁটে দেখেছি, আসন্ন এলএনজিকে সামনে রেখে তারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধিও এ প্রস্তাব করেছে। এটি আসতে আরও ন্যূনতম দুই বছর সময় লাগবে। এটি আসার আগেই দাম বৃদ্ধিও প্রস্তাব দেওয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এলএনজির খরচে বোঝা কেন জনগণের মাথায় পড়বে। এটা তো জনগণ মেনে নেবে না।
শুনানিতে অংশ নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য রুহীন হোসেন প্রিন্স বলেন, উচ্চ মূল্যে এলএমজি আমদানির কথা বলে কেন জিটিসিএল গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিল, এটাই আমার মাথায় আসছে না। কারণ জিটিসিএল নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। এটা ভবিষ্যতে এলএনজি আমদানি হবে সেটির ওপর ভিত্তি করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব হাস্যকর।
গতবছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে পকেট কাটতে আর এবার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে পকেট ফাঁকা করতে। তাই দেশের শিল্প রক্ষার স্বার্থে নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
এছাড়াও গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক খন্দকার সালেহ সূফী ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি।