অপরাধ কমাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের জিরো টলারেন্স

downloadসৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমাতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্টকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যেই হোক এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা হবে।

সূত্র জানায়, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা।

সম্প্রতি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়ার মৃত মোশাররফ হোসেন শেখের ছেলে প্রবাসী রুহুল আমিনকে অপহরণ করা হয়।

তিনি রিয়াদের তালাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত ১ আগস্ট ‍রাতে বাসা থেকে বাংলাদেশের ২০/২৫ জনের একটি দল মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
পরে দেশে তার মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। রে গ্রুপটি। পরে স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছাড়াও দূতাবাসের চেষ্টায় ৪ আগস্ট মুক্তি পান রুহুল আমিন।

অপহৃত রুহুল আমিন বলেন, দূতাবাস, কমিউনিটি নেতাদের উদ্যোগে বেঁচে ফিরেছি। কিন্তু তারা অমানবিক নির্যাতন ছাড়াও আমার ফোন ও সাড়ে চার হাজার নগদ রিয়াল নিয়ে গেছে।

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার মেঘনা থানার শফিকুল ইসলাম খোকন ও রিয়াদের লোকাল ম্যানপাওয়ার সাপ্লাই অফিসের কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গেও। ২ জুলাই অপহরণের পর দেশে গাজীপুরের কালীগঞ্জে মুক্তিপণের ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

এ সময় অপহরণকারীর স্ত্রী, শ্যালক-শ্যালিকাকে আটক করে র‌্যাব-১১। এরপর ৬ জুলাই রিয়াদের একটি আবাসিক হোটেল থেকে মুক্তিপান খোকন।

শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, এ ধরনের ঘটনায় আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি-ই। সৌদি সরকারের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি নিজ কর্মস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা আবু বকর সিদ্দিককে তুলে নিয়ে যায় ৩-৪জন সৌদি নাগরিক। অপরাধ ছ‍াড়াই স্থানীয় উম্মুল হাম্মাম থানায় নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় তাকে।

পরে এক বাংলাদেশির মাধ্যমে তার কাছে দেড় লাখ রিয়াল দাবি করা হয়। অনেক দরকষাকষির মাধ্যমে নগদ ৭০ হাজার রিয়াল (১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা) দিয়ে মুক্তি পান বকর।

ভুক্তভোগী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। এটি সৌদি আরবে থাকা ২০/২২ লাখ বাংলাদেশিদের বড় ধরনের বিপদে ফেলতে পারে। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।

এ সব ঘটনায় স্থানীয় থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জড়িতদের গ্রেফতারেও সৌদি প্রশাসন কাজ করছে বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মিজানুর রহমান বলেন, ডাকাতি, অপহরণসহ আইন পরিপন্থি যে কোনো অপরাধ রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়গুলো সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত আকারে জানানো হয়ছে। অপহরণকারীদের বিস্তারিত তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

এ ধরনের কোনো ঘটনার মুখোমুখি হলে প্রবাসী অথবা তাদের স্বজনদের দ‍ূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন মিজানুর রহমান।

তবে দূতাবাসের মিশন উপ প্রধান মো. নজরুল ইসলাম  বলেন, দূতাবাস পুলিশের ভূমিকায় যেতে পারে না। আমরা সৌদি প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

‘আমরা এই ধরনের সব তথ্য সৌদি পুলিশকে দিচ্ছি ও তারা এটা নিয়ে কাজ করছে।’

সৌদি সরকার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা জিরো ট্রলারেন্স। কোনো অপরাধীকে আমরা প্রশ্রয় দেবো না, সে যেই হোক।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.