কেউ পাঠ নিচ্ছেন ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের, আবার কেউ গ্রাফিক ডিজাইনের। সব মিলিয়ে এই দুই বিষয়ে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই নারী। ৭ জুলাই রাজধানীর ফার্মগেট আরআরএফ ইনস্টিটিউটের কার্যালয়ে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ব্যাপারে মিল রয়েছে। আরআরএফ ইনস্টিটিউট থেকে বৃত্তি পেয়ে চার মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁরা। এই প্রশিক্ষণের পর তাঁরা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করবেন।
‘নারীর হাতে সুন্দর আগামী’ স্লোগানে ২০১৫ সাল থেকে আরআরএফ ইনস্টিটিউট নারীদের বৃত্তির মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রাসেল আহমেদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের আগ্রহী করে তুলতে এই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের যোগ্য করে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা করতে পারবেন। তাঁদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: http://rrfinstitute.com।
আরআরএফ ইনস্টিটিউটে ওয়েব ডিজাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী রুপা আহমেদ বলেন, ‘ওয়েব ডিজাইন বিষয়ে আমার প্রাথমিক পাঠের শুরুটা হয় এ প্রতিষ্ঠানেই। এখন আমি অনেক কিছু শিখেছি।’ অন্যদিকে গ্রাফিকস ডিজাইনে বৃত্তি পাওয়া রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাজিয়া আফরিন পিয়াল বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’
বছরের মধ্যভাগে নারীদের বৃত্তি প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক আবেদনকারীকে দেওয়া হয় যার যার কোর্সের জন্য ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিকস বিষয়ে পাঁচটি ভিডিও টিউটোরিয়াল। তা দেখার পর জমা দিতে হয় প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। এরপর লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় কারা বৃত্তি পাবেন। ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং গ্রাফিকস ডিজাইনে যথাক্রমে ৮০ ও ৪০ জন করে বৃত্তি পান। কোর্স শুরু হওয়ার আগে রেজিস্ট্রেশন বাবদ দিতে হয় এক হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিব রাফে বলেন, ‘এখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করার পর ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী কাজ পান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে।’
আর যাঁরা বৃত্তি পান না কিংবা ঢাকার বাইরে বসবাসের কারণে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না, তাঁদের জন্য পুরো কোর্সের ভিডিও টিউটোরিয়াল দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে। এ ছাড়া গ্রাফিকস, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন, পিএইচপি, লারাভেল ফ্রেমওয়ার্ক এবং জাভা সম্পর্কে প্রায় চার হাজার ভিডিও টিউটোরিয়াল দেওয়া আছে ইউটিউবে। প্রতিটি টিউটোরিয়াল বাংলা ভাষায় তৈরি করা হয়েছে। নাজিব রাফে বলেন, এসব ভিডিওর মাধ্যমে যে কেউ নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারবেন আউটসোর্সিংয়ে।
এবার কিছুটা পেছনে ফিরে দেখা যাক। প্রথম আলোতে এর আগেও কয়েকবার সংবাদ ছাপানো হয়েছিল কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) রাসেল আহমেদকে নিয়ে। দোকানে ১০০ টাকা বেতনে চাকরি নিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং আয়ত্ত করেছিলেন তিনি। এরপর শুধুই এগিয়েছেন। তিনি একা নন। তাঁর হাত ধরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বহু তরুণ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছেন। নিজে যেমন নিজেকে গড়েছেন, অন্যকেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। আর তাঁদের মধ্য থেকেই বাছাই করা মুক্ত পেশাজীবীরা প্রশিক্ষণ দেন এই ইনস্টিটিউটে।
২০১২ সালের জুন মাসে রাসেল প্রতিষ্ঠা করেন আরআর ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনেরই সহপ্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আরআরএফ ইনস্টিটিউট। নামের এই দুটি আর-এর একটি রাসেল, আরেকটি রাজিবুল ইসলাম। একসময় ভেড়ামারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন রাজিবুল ইসলাম। রাসেলের এগিয়ে যাওয়াতে সহযোগিতা করেছেন এই কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা।
রাসেল আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আরআরএফ ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী। উত্তরে বলেন, দেশে আউটসোর্সিংয়ে একটা দক্ষ দল গড়ে তোলা।
আরও খবর