মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা, সাবধানতা ও প্রতিকার

mobile bankingদ্রুততম সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো মোবাইল ব্যাংকিং। আর এই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেই ঘটছে প্রতারণার ঘটনা। একটি চক্র অত্যন্ত সু-কৌশলে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে বহু টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং বিশেষ করে বিকাশের মাধ্যমে এ প্রতারণা ঘটছে সবচেয়ে বেশি।

সারাদেশে রয়েছে বিকাশের এ রকম হাজারো চক্র আর প্রতারক সিন্ডিকেট। মূলত ক্ষুদে বার্তা এসএমএস এর মাধ্যমেই এই কাজটি করা হয়। ভুল করে বিকাশে টাকা চলে গেছে এরকম কথা বলে সেই অংকের টাকা ফেরৎ পাওয়ার আশায় গ্রাহকের ফোনে কল দিয়ে অনেক আকুতি মিনতি করে টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্র।

কীভাবে এ প্রতারণা হয় বা এর প্রতিকারের উপায়ই বা কী এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনসের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল।

প্রতারণার গল্পটা শুনি

আশিক কাজ করতো আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। গরীব বাবা-মার একমাত্র সন্তান সে। প্রতিমাসে তাই বাবা-মাকে বেতনের অর্ধেকটাই পাঠাতেন তিনি। গত রোববার ও পাঁচ হাজার টাকা পাঠায়ে ছিল সে। কিন্তু টাকাটা প্লাসে মাইনাসে পুরোটাই মাইনাস হয়ে গেছে। কী ভাবে হলো এটা? জানতে চাইলে আশিক বলেন- আমি টাকাটা পাঠানোর একটু পরেই আমার বাবার ফোনে এক ব্যক্তি ফোন করে বলে যে উনি একজন বিকাশ দোকানদার। তার দোকান থেকে একটু আগে ভুল করে ওই নম্বরে ৫০০০/- টাকা চলে গেছে। বাবা বললেন দাঁড়ান আমি দেখে জানাচ্ছি। ওই লোক টাকাটা ফেরৎ পাঠানোর জন্য কান্না জড়িত কন্ঠে খুব অনুরোধ করেন ওই ব্যক্তি। বাবা ফোন রাখার সাথে সাথে আর একটি মেসেজ যায় বাবার মোবাইলে। বাবা ব্যালেন্স চেক না করেই মার কাছে থাকা ৫০০০/- পুনরায় বিকাশ করে দেন ওই মোবাইল নম্বরে।

কীভাবে চলে এই প্রতারণা?

সম্প্রতি বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণার কারণে একটি চক্রকে আটক করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে চক্রেরই একজন মিজানুর রহমান তাদের প্রতারণার কৌশল ও কাজের ধরণ নিয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু তথ্য। মিজানের বাড়ি ফরিদপুর জেলার মধুখালী জেলার ডুমাইল গ্রামে।

প্রতারক মিজানের ভাষ্য

আমাদের একজন লিডার আছে। তার নাম খায়ের চৌধুরী। তার অধীনেই কাজ করি আমরা। আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা ২০-২৫ জন। যারা সব সময় যেসব দোকানে থেকে বিকাশ হয় সেসব দোকানের আশপাশে ঘুরাফিরা করি। কোনো ব্যক্তি বিকাশ করতে এলে কৌশলে যে নম্বরে বিকাশ করা হচ্ছে সে নম্বরটি জেনে তৎক্ষনাৎ লিডার খায়েরকে ফোনে ওই নম্বরটি জানিয়ে দেই। তিনি প্রথমে ওই নম্বরে ফোন করে কাতর স্বরে বলেন- ভাই একটু আগে আপনার ফোনে ভুলে আট হাজার টাকা চলে গেছে। একটু দয়া করে ব্যালেন্স চেক করুন।

একটু পরেই আবার ওই ব্যক্তিকে ফোন করে বলা হয় ব্যালেন্স চেক করেছেন। তিনি তখন বলেন-‘না আমার ফোনে তো পাঁচ হাজার টাকাই এসেছে। ভুল করে কোনো টাকা তো আসেনি।’

ব্যস কেল্লাফতে। আমাদের আসলে এতটুকুই জানা দরকার। অ্যামাউন্ট জানার সাথে সাথে ওই নম্বরে ভুয়া ফরওয়ার্ডকৃত আট হাজার টাকার একটি এসএমএস চলে যাবে। পরে আবার তাকে লিডার ফোন দিয়ে বলবে-ভাই দয়া করে এখন একটু ব্যালেন্স চেক করুন। পরে দ্বিতীয় বারের মেসেজ দেখে ওই টার্গেটকৃত ব্যক্তি ব্যালেন্স চেক না করেই বলেন-হ্যাঁ তিন হাজার টাকা বেশি এসেছে। তখন অনেক আকুতি মিনতি করে ওই ব্যক্তিকে বলা হয়-ভাই আমি একজন গরীব বিকাশ দোকানদার। দয়া করে টাকাটা ফেরৎ দিন। না হলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। তখন টার্গেটকৃত ব্যক্তি ব্যালেন্স চেক না করেই সাথে সাথে কথিত তিন হাজার টাকা পুনরায় প্রতারকের মোবাইলে বিকাশ করে দেন। এভাবেই চলে প্রতারণা।

বিকাশে টাকা পাঠানোর সময় যেসব বিষয় লক্ষণীয়

১। অবশ্যই ভালো ও বিশ্বস্ত বিকাশ এজেন্ট থেকে টাকা পাঠান।

২। টাকা পাঠানোর সময় লক্ষ্য রাখুন পাশের কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে কিনা। এক্ষেত্রে একটু সাবধান হোন।

৩। আপনার প্রেরিত টাকার অংক সাথে সাথে বা টাকা পাঠানোর আগে প্রাপককে জানিয়ে দিন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.