সুইস ব্যাংকের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বাংলাদেশ: রাষ্ট্রদূত

সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা নিয়ে নির্দিষ্ট করে সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে বাংলাদেশ সরকার কোনো তথ্য চায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়া। বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এসব বিষয়ে (তথ্য পাওয়া) কীভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, সে বিষয়ে সরকারকে সব ধরনের তথ্য আমরা দিয়েছি। কিন্তু আলাদাভাবে অর্থ জমা করার বিষয়ে কোনো অনুরোধ আসেনি।’ অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে সরকার কোনো অনুরোধ করেনি-এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ রকম সুনির্দিষ্ট কোনো অনুরোধ আমরা পাইনি।’

নাথালি শুয়া বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে সুইজারল্যান্ড প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এ ধরনের তথ্য কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে বিনিময়ের জন্য আমাদের কিছু নিয়ম ও চুক্তি আছে। সুতরাং আমাদের (বাংলাদেশকে) এ রকম কোনো প্রক্রিয়া বের করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারি।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, সুইজারল্যান্ড কালোটাকা রাখার স্বর্গরাজ্য নয়। এ বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সুইজারল্যান্ড সরকার সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধন করতে কাজ করে যাচ্ছে। সুইস ব্যাংক আন্তর্জাতিক সব প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করে। সেখানে কালোটাকা বা দুর্নীতির অর্থ রাখার কোনো নিয়ম নেই।

বাংলাদেশের জন্য সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে নাথালি শুয়া বলেন, গত বছর দুই দেশের বাণিজ্য এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। সুইস সরকার ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। আগামী দিনগুলোতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সুইস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ দেশে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে সুইস সরকারের সহায়তা রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারলে এ দেশের জনগণ আরও বেশি উপকৃত হবে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুইজারল্যান্ড সব সময় পাশে আছে। রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদে প্রত্যাবাসন হোক, এটি চেয়ে আসছে সুইজারল্যান্ড। নাথালি শুয়া বলেন, সবুজ জ্বালানি ও প্রযুক্তির প্রসারে সুইস সরকার অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না। তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়।

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশিরভাগই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.