বেশির ভাগই দর্শক টানতে ব্যর্থ

04d9acff019166eea83aee570a972bf7-23জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র কতগুলো? দর্শকনন্দিতই বা কোনটা? তারই হিসাব-নিকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
.বলিউডের কোনো কোনো ছবির খবরে দেখা যায় মুক্তির প্রথম দিনই প্রায় ১০ কোটি রুপি আয় করেছে। প্রথম সপ্তাহেই কখনো কখনো সেই আয় এক শ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। ৯০ দশক পর্যন্ত ঢালিউডের সিনেমাতেও ব্যবসা হয়েছে। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ছবিতে লগ্নিকৃত অর্থের নব্বই শতাংশ প্রযোজকের ঘরে উঠে গেছে, যা এখন কেবলই ইতিহাস। আর এই হতাশার শুরুটা ২০০০ সালের পর থেকে। নতুন ছবির মুক্তির আগে টেবিল-সংগ্রহের অর্থে ভাটা পড়তে থাকে।
এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঢালিউডে মুক্তি পাওয়া ২৭টি (ভারতের ছবি বেপরোয়া, শঙ্খচিল ও বেলা শেষে বাদে) ছবির ব্যবসায় সে চিত্রই পাওয়া যায়।
২৭টি ছবির মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি-২, সুইটহার্ট, পুড়ে যায় মন, রাজা ৪২০, হিরো ৪২০, মুসাফির ছবিগুলোর মুক্তির প্রথম সপ্তাহে লগ্নিকৃত অর্থের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ টাকা ফেরত এসেছে। আর বাকিগুলোর বেশির ভাগই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই এসব ছবির প্রযোজকদের লগ্নিকৃত অর্থের শতকরা ৭০ থেকে ৯০ ভাগই লোকসান হয়েছে। ছবির পরিচালক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, বুকিং এজেন্ট ও প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের কাছ থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট লোকজন মনে করছেন, ভালো গল্প, গল্পের উপস্থাপন, বাজেট ও ভালো শিল্পী না থাকার কারণেই নাকি দর্শকেরা প্রেক্ষাগৃহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
গুণী নির্মাতা ও অভিনেতা আমজাদ হোসেনও এমনটা মনে করেন। তাঁর ভাষায়, ‘চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘‘ডিরেক্টর’’-নির্ভর মিডিয়া। পরিচালকই জাদুকর। যিনি দর্শক হাসাবেন, কাঁদাবেন। তাঁকে দর্শকের মনের ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। তা না হলে চলচ্চিত্র হবে না। এখন ছবির গল্প, উপস্থাপন কৌশল ও শিল্পীর অভাব। ফলে দর্শকেরাও প্রেক্ষাগৃহে আসছেন না।’
তিনি বলেন, ‘একসময় শাবানা, ববিতা, আলমগীর, ফারুক, কবরীদের ছবি দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে মানুষের ঢল নেমে যেত। সেই ধরনের শিল্পী কোথায়? ছবিতে সে রকম গল্পই বা কোথায়?’
ছয় মাসের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির তালিকায় আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ছবি অঙ্গার, হিরো ৪২০ ও অনেক দামে কেনা। বড় বাজেটের ছবি তিনটি থেকে লগ্নি করা পুঁজির অর্ধেকও ফেরত আসেনি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবদুল আজিজ বলেন, ‘ছবি তিনটির গল্প দর্শকেরা পছন্দ করেননি। হিরো ৪২০ থেকে কিছু টাকা ফেরত এলেও বাকি দুটি ছবিতে আমাদের বড় ধরনের লোকসান হয়েছে।’
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে এখন দরকার ভালো গল্প, বড় বাজেট, ভালো অভিনয় শিল্পী, ভালো কোরিওগ্রাফির গান।
তবে একটা বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন প্রযোজক ও মধুমিতা মুভিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভালো গল্প, ভালো পরিচালক, ভালো শিল্পী থাকলে কম বাজেটেও ভালো ছবি বানানো সম্ভব।’
গেল ছয় মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির মধ্যে আইসক্রিম ছবিটিও আছে। ছবির পরিচালক রেদওয়ান রনি বলেন, ‘মুক্তির প্রথম সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহ থেকে ছবির খরচের মাত্র ১০ ভাগ টাকা এসেছে। এই ছবি থেকে পুরো টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
ঢাকাসহ ঢাকার বাইরে আটটি হলে ছবি সরবরাহ করেন সিনেমা বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি সারোয়ার ভূঁইয়া। মুক্তি পাওয়া ২৭টির মধ্যে ২০টি ছবিই তাঁর প্রেক্ষাগৃহগুলোতে সরবরাহ করেছেন। পাঁচ-ছয়টি ছবি প্রথম সপ্তাহ চলেছে। বাকিগুলো মুক্তির দু-তিন দিন পরেই হল থেকে নেমে গেছে।
সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, ‘ছবি ভালো না হলে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের আগেই বুঝে যান। এখনো সিনেমার দর্শক আছে। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের ভালো গল্প, গল্পের উপস্থাপনা ও ভালো শিল্পী লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছরে ছয় মাসে মুক্তি পাওয়া ছবি থেকে বুকিং এজেন্ট, প্রেক্ষাগৃহ মালিকেরাও লোকসান দিয়েছেন। আর প্রযোজকদের কথা তো বাদই দিলাম।’
এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর শহরের হ্যাপি সিনেমা হলের মালিক মোজাম্মেল হায়দার বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রায় সব ছবিই আমার হলে প্রদর্শিত হয়েছে। কয়েকটা ছবি ছাড়া সবই লোকসান হয়েছে।’
সোজাসাপটা তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ ছবিই ভালো হয়নি। দশর্কও প্রেক্ষাগৃহে আসেননি।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.