বেশীরভাগ মানুষ উচ্চতাকে ভয় পায়। কিন্তু আমি উচ্চতাকে ভয় পাই না। আমি ভয় পাই বরং ওসারকে, প্রস্থকে।’ হাসির ছলে বলেছিলেন মার্কিন কৌতুকাভিনেতা স্টিভেন রাইট।
কৌতুক জগতের মানুষ তাই ঠাট্টা করেই বলেছেন স্টিভেন রাইট। কিন্তু দিন দিন মানুষ যেভাবে লম্বায় না বেড়ে ওসারে (প্রস্থ) বাড়ছে, তা ঠিক মজা-মশকরার বিষয় নয় মোটেও।
ফিটনেস বা স্বাস্থ্যবান শরীর অনেক বড় বিষয়। কিন্তু মানুষ তার ফিটনেসকে ফ্যাশন হিসেবে দেখছে, তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে কি?
না, একেবারেই দিচ্ছে না বললে ভুল হবে। স্টিভেন রাইটের দেশেরই এক দল খুদে উদ্ভাবক ফিটনেস নিয়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা কাজ করেছেন। এরা যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। কিশোর-কিশোরীরা যেন ফিটনেস নিয়ে সচেতন হয়, সে জন্য তারা উদ্ভাবন করেছেন একটি অভিনব অ্যাপ। আর সেই অ্যাপ তাদের এনে দিয়েছে রাজ্যসেরা অ্যাপ উদ্ভাবকের স্বীকৃতি।
আর সেই দলে আছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক কিশোরী। প্লাবনী শরীফ। জর্জিয়ার মিডো ক্রিক হাইস্কুলের এগারো গ্রেডের (একাদশ শ্রেণী) শিক্ষার্থী। একই স্কুলের আরও পাঁচ সহযোগী শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে প্লাবনী উদ্ভাবন করেছেন ‘টিন ফিটনেস’ অ্যাপ।
কী কাজে লাগবে এই অ্যাপ?
প্লাবনী যেমনটা জানিয়েছেন, ‘ফিটনেস ধরে রাখার জন্য চাই নিয়মিত শারীরিক চর্চা। আমাদের এই অ্যাপ কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবে।’
কেন? কী এমন আছে বাঙালী এই কিশোরীর উদ্ভাবিত অ্যাপে?
প্লাবনী বলেন, ‘ব্যায়াম করার জন্য চাই উপযুক্ত জায়গা। কিশোর-কিশোরীদের ব্যায়াম করার জন্য যুতসই সেবা জুড়ে দেওয়া আছে আমাদের অ্যাপে।’
শুধু ব্যায়ামের স্থানই নয়, স্বাস্থ্যসম্মত-রুচিসমৃদ্ধ খাবারও তো চাই শরীর ফিট রাখার জন্য। সে সবও বাদ যায়নি প্লাবনীদের ‘কিশোর ফিটনেস’ অ্যাপ।
১৬ বছর বয়সী উদীয়মান উদ্ভাবক প্লাবনী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত মেনুসমৃদ্ধ রেস্টুরেন্ট খুঁজে পেতেও বন্ধুর মতো কিশোরদের কাজে লাগবে এই অ্যাপ।’
এমন দরকারী বন্ধুকে তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না খালি হাতে। বাস্তবে হলও তাই। প্লাবনী ও তার দল জিতে নিলেন ভেরিজন অ্যাপ চ্যালেঞ্জের রাজ্যসেরা মুকুট।
প্রতিযোগিতার মূল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, নবম-দ্বাদশ গ্রেডে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেরা অ্যাপ নির্বাচিত হয়েছে প্লাবনীদের ‘টিন ফিটনেস’।
শেকড় বাংলাদেশে
প্লাবনীর জন্ম জর্জিয়ায়। কিন্তু তার পৈতৃক ভিটে আমাদের এই বাংলাদেশে। মা সালেহা বিলকিস, যশোরের উপশহরে যার বেড়ে ওঠা। বাবা শরীফ উল ইসলাম, বাড়ি যার ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। শরীফ-বিলকিস দম্পতি ’৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। জর্জিয়ার রাজধানী আটলান্টার খুব কাছে নরক্রস সিটিতে বসবাস করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হলেও প্লাবনী বাংলায় কথা বলতে পারেন। বাংলায় কথা বলার বিষয়ে প্লাবনী বলেন, ‘মা-বাবার কাছ থেকেই আমার বাংলা শেখা।’
বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কী ধারণা, প্রশ্ন করলে প্লাবনী বলেন, ‘আমার শিকড় তো বাংলাদেশে। দাদী, নানা-নানী, মামারা সবাই বাংলাদেশে আছেন। অসম্ভব ভালবাসি বাংলাদেশকে।’
প্লাবনীর স্বপ্ন বড় হয়ে আরও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে বলে জানান প্লাবনী।
প্রসঙ্গত, প্লাবনীর দলে যারা ছিলেন তারা হলেন— হং ওয়াং, অবনিত শেঠি, বিরিদিয়ানা মাসিয়াস, ব্রেন্ডা গাটিরেজ ও ক্রিস্টোফার পারুঙ্গাও। মিডো ক্রিক হাই স্কুলের শিক্ষক পিন্টু থাকর।