গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বেতনভাতাও ঠিকমত পাচ্ছেন না। নিজে দেশের শ্রমিকদের সৌদি থেকে ফেরত নিচ্ছে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এমনই এক অবস্থায় দীর্ঘ সাত বছর পর বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে সৌদি আরব। যা বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য বিরাট এক সম্ভাবনার সুযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারো কারো মতে, সৌদি আরবের এ মন্দা বাংলাদেশের জন্য ‘শাপেবর’। কারণ, অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের পরিবর্তে সস্তা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশিদের কথাই ভেবেছে দেশটি।
তবে এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ফি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সৌদিতে শ্রমিকদের পাওনা আদায় করাটাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
গত বুধবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। দীর্ঘ সাত বছর শুধুমাত্র নারী গৃহকর্মীরা ছাড়া সব খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ রাখে দেশটি। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এখন সব খাতে দক্ষ, আধাদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের পাশাপাশি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নার্স ও শিক্ষকদের মতো পেশাজীবীদেরও সৌদি আরবে কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
এ বিষয়ে অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ওয়ারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, মন্দার কারণে সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি কোম্পানি শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সৌদি থেকে কর্মী ফেরত নিচ্ছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। দীর্ঘদিন পরে বাজারটি উন্মুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
তবে সৌদি আরবের বাজার বলতেই জনপ্রতি ৫-৭ লাখ টাকা আদায় করে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। একজন শ্রমিক এতো টাকা খরচ করে সেখানে গিয়ে যদি সে টাকা আয় করতে না পারেন তখনই তিনি বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
সৌদির অর্থনৈতিক এ মন্দা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হলেও ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
সাইফুল হক বলেন, ইমিগ্রেশন ফি কমানোর পাশাপাশি সৌদি যাওয়ার পর শ্রমিকরা ঠিকমত বেতন ভাতা, ওভারটাইম পাবেন কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ বিষয়ে সৌদির সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরেই শ্রমিক পাঠাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, আমাদের শ্রমিকরা স্বল্প বেতনেও কাজ করতে চায়। এটা এ মুহূর্তে ভালো সুযোগ বলতে হবে। সৌদিতে অর্থনৈতিক মন্দা চললেও আমাদের শ্রমিকরা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাতে কাজ করে। ফলে তাদের ছাঁটাই হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তার মতে, সৌদি আরব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে গতি ফিরিয়ে আনবে।
তবে পুরোনো পদ্ধতিতেই রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমেই সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ফি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের মনিটরিং জোরদার করা হবে বলে জানান জাবেদ আহমেদ।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই সৌদি আরবের শ্রমবাজারটি পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়েছে। গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরে এটি ছিল অন্যতম প্রধান এজেন্ডা।
শ্রমবাজার উন্মুক্ত করায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি বাদশাহকে তার উদারতা ও অব্যাহত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
২০০৮ সালে সৌদির করা নতুন নিয়মের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ অনেকটাই কমে আসে। ২০০৯ সাল থেকে দেশটির যেকোনো খাতে সর্বোচ্চ ২০ ভাগ বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার নিয়ম চালু করলে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ একেবারেই থেমে যায়।
সরকারি হিসেবে, বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ১৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। যাদের ৬০ হাজারেরও বেশি নারী গৃহকর্মী।