যাত্রীর লাগেজ সঙ্গে নিয়ে না আসা (লাগেজ লেফট বিহাইন্ড) অলিখিত নিয়মে পরিণত করেছিলো কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন। বাংলাদেশে আসা প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটেই ২০ থেকে ৫০ জন যাত্রীর সঙ্গে এটা ঘটছিল।
এয়ারলাইনগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তেন অল্প সময়ের ছুটিতে আসা প্রবাসী কর্মীরা। িবিশেষ করে ঈদের ছুটিতে দেশে আসা অনেক প্রবাসীর ঈদের আনন্দ মাটি হয় নিজের ও প্রিয়জনদের জন্য আনা জিনিসপত্রের লাগেজ না পেয়ে।
অবশেষে বিনা কারণে যাত্রীদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে লাগেজ না আনার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে হয়েছে কয়েকটি এয়ারলাইনকে। সুফলও মিলেছে কঠোর অবস্থানের। কমেছে লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড।
সাধারণত বাজেট (লো কস্ট ক্যারিয়ার) এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ডের ঘটনা ঘটতো। গত কয়েক মাসে বাজেট এয়ারলাইনের পাশাপাশি সব ধরনের এয়ারলাইনের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড বেড়েছিল মাত্রাতিরিক্ত। এরমধ্যে জাজিরা এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, এয়ার অ্যারাবিয়া, কুয়েত এয়ারওয়েজ, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই, ওমান এয়ার, গালফ এয়ারের ফ্লাইটে ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বেশি হচ্ছিল। এর মধ্যে সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, এয়ার অ্যারাবিয়া প্রতিটি ফ্লাইটে কমপেক্ষে ২০-৭০ জন যাত্রীর ব্যাগ সঙ্গে না নিয়ে চলে আসতো।
যাত্রীদের লিখিত কোনও ডকুমেন্ট না দিয়েই তিন-চার
দিনের মধ্যে বাড়িতে লাগেজ পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতো এয়ারলাইনগুলো। তবে কোনও কোনও যাত্রীর ালাগেজ পেতে পার হতো এক মাসেরও বেশি সময়। অন্যদিকে লেফট-বিহাইন্ড লাগেজ কুরিয়ারে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও সালাম এয়ার ও জাজিরা এয়ারওয়েজ যাত্রীদের ঢাকায় নিয়ে আসতো। সার্বিকভাবে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
লাগেজ লেফট বিহাইন্ড কী?
এভিয়েশন খাতের পরিভাষায়, লাগেজ লেফট বিহাইন্ড মানে হচ্ছে একটি ফ্লাইটে যাত্রীর সঙ্গে তার লাগেজগুলো নির্ধারিত গন্তব্যে না পৌঁছানো। মূলত যাত্রীকে নিয়ে আসলেও বিভিন্ন কারণে ইচ্ছাকৃত ভাবে এয়ারলাইন যাত্রীর লাগেজ লাগেজে নিয়ে আসেনি। লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হতে পারে নানা কারণে। একটি উড়োজাহাজ আকাশে ওড়ার ক্ষেত্রে ভার বহনের সক্ষমতা নির্ধারিত। খালি উড়োজাহাজের ওজন, যাত্রীদের ওজন, যাত্রীদের লাগেজের ওজন, উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের ওজন সব সমন্বয় করে আকাশে ওড়ার জন্য নির্ধারিত ওজন ঠিক রেখে ফ্লাইটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কখনও কখনও ফ্লাইটে যাত্রীদের সঙ্গে লাগেজের সংখ্যা বেড়ে গেলে
এয়ারলাইনগুলো লাগেজ কমিয়ে ওজনের সমন্বয় করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। আবার কখনও কখনও আবহাওয়া খারাপ থাকলে লাগেজ কমিয়ে জ্বালানি তেল বেশি নেয় এয়ারলাইনগুলো। এছাড়া কারিগরি ত্রুটি, মিস হ্যান্ডলিং, ভুল ট্যাগিং, ট্রানজিটে যান্ত্রিক ত্রুটি সহ নানা কারণে লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে অন্য ফ্লাইটে জায়গা খালি থাকলে লাগেজ নিয়ে এসে যাত্রীদের দেওয়া হয়।
শাস্তির মুখোমুখি বিদেশি এয়ারলাইন
দিনের পর দিন যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলছিল কয়েকটি এয়ারলাইন। যদিও বিমানবন্দরে যাত্রীদের বলা হতো দুই-তিন দিনের মধ্যে লাগেজ বাড়িতে পাঠানো হবে, কিন্তু অনেকেই এক সপ্তাহেও লাগেজ পেতেন না। হয়রানির এখানেই শেষ নয়, যাত্রীদের নিজেদের ফোন নম্বর দিলেও কোনও এয়ারলাইন যাত্রী বিমানবন্দর থেকে চলে যাওয়ার পর রেসপন্স করতো না ঠিকমত।
বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে লাগেজ লেফট বিহাইন্ড বন্ধে জুন মাস থেকে কয়েক দফা বৈঠক করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। লাগেজ লেফট-বিহাইন্ড বন্ধে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানালেও আমলে নেয়নি কয়েকটি এয়ারলাইন।
পরবর্তীতে বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কঠোর অবস্থান নেয়। লেফট বিহাইন্ড বন্ধ না করলে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি কমানো, সিট কমানো, আর্থিক জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়, একজন যাত্রী লাগেজ না পেলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এয়ারলাইনকে। ইতোমধ্যে এয়ার অ্যারাবিয়া, জাজিরা এয়ারওয়েজ ও সালাম এয়ারের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার যাত্রী বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। এয়ারলাইনগুলোর সঙ্গে আমরা আলাপ আলোচনা করে লেফট বিহাইন্ড বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে সুফলও পেয়েছি। এখন লেফট-বিহাইন্ডের হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। আগের মতো আর লেফট-বিহাইন্ড নেই।