দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারনেট সেবায় এখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ

imagesআন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার অবনতির খবর অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) উন্নয়ন সূচক ২০১৬’ প্রতিবেদনে ইন্টারনেট ব্যবহারে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রায় সবার নিচে অবস্থান বাংলাদেশের।

আর দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু আফগানিস্তানের আগে আছে বাংলাদেশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪। এই প্রতিবেদন তৈরি করতে ২০১৫ সালের তথ্যউপাত্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। র‌্যাঙ্কিং তৈরিতে ১১টি সূচককে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি দেশে প্রতি ১০০ জনে কতজন মোবাইল ফোন, সংযুক্ত বা ফিক্সড টেলিফোন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ফিক্সড ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহার করেন সেগুলোর ভিত্তিতে র‌্যাঙ্কিং তৈরি করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি একটি দেশের সার্বিক শিক্ষার হার, কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার হারকেও র‌্যাঙ্কিং তৈরিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ১১টি সূচক যোগ করে ২০১৫ সালে ১০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২ দশমিক ২২। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের থেকে ভালো অবস্থানে আছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির অবস্থান ১১৫। এরপর ভুটান, ১১৯ নম্বরে। ভারত আছে ১৩১ নম্বরে, নেপাল ১৩৬ নম্বরে। এরপর ১৪২ থেকে ১৪৪ নম্বর স্থানে আছে যথাক্রমে মিয়ানমার, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় সব শেষে আছে আফগানিস্তান (১৫৬)। ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৮। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে মাত্র চার ধাপ। একই সময়ে ভারত ১২৫ থেকে ছয় ধাপ পিছিয়ে ১৩১ ও পাকিস্তান ১৩৮ থেকে পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ১৪৩ নম্বরে এসেছে।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেট-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ভাগের দেশগুলোতে ইন্টারনেট-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ বা এর কম, দ্বিতীয় ভাগের দেশগুলোতে ৫০ শতাংশ বা এর কম, তৃতীয় ভাগে ৭৫ শতাংশ বা এর কম আর শেষ ভাগে আছে ৭৬ শতাংশ বা এর বেশি। বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ের দেশগুলোর মধ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ইন্টারনেট-সুবিধার বাইরে থাকা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমপক্ষে ৭৬ শতাংশ।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ইন্টারনেট-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর গড় ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ এশিয়ার গড় মান থেকে অনেক পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৬: ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট-বঞ্চিত একক জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পাঁচ নম্বর।

বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার বা ইথিওপিয়ার মতো দেশ। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ বা ১৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবাবঞ্চিত। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে মোবাইলে কথা বলার খরচ তুলনামূলক কম রয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট খরচ অনেক বেশি। এখনও দেশে ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবার বাইরে। মোট কর্মসংস্থানের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ ভাগ হলো তথ্য প্রযুক্তি খাতে।

ইন্টারনেট সেবায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পরা প্রসঙ্গে টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু সায়িদ খান বলেন, এই পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে মূলত দুটি বাধা কাজ করে। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বেশি এবং ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরিতে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা—এই দুই কারণেই ইন্টারনেট সংযোগে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মূল সেবা প্রদানকারীর কাছে থেকে গ্রাহকের কাছ পর্যন্ত ইন্টারনেটের সংযোগ পৌছতে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের হস্তক্ষেপে দাম বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মত দেন আবু সায়িদ খান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত জুন পর্যন্ত দেশে মোবাইল, পিএসটিএন, আইএসপি ও ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের সব মিলে সক্রিয় ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৫৮ হাজার, আইএসপি ও পিএসটিএনদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৩৫ লাখ ২০ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে ১ লাখ ১২ হাজার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.