বিমান এয়ারলাইনসের আরও ৪ কর্মকর্তাকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

মিসর থেকে বোয়িং কোম্পানির দুটি উড়োজাহাজ ইজারায় (লিজ) ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরও চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কমিশনের সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে একটি দল।

যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন বেসামরিক বিমান চলাচল প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাইফুল হক শাহ, এয়ার কনসালট্যান্ট গোলাম সারওয়ার, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদ। এর আগে গত সোমবার বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মিসর থেকে দুটি উড়োজাহাজ লিজ-সংক্রান্ত অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে লিজ-সংক্রান্ত অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। স্থায়ী কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লিজ চুক্তির ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোনো দুর্বলতা আছে কি না, সেটি অনুসন্ধান চলছে। এখন পর্যন্ত বিমানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মিসর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ-সংক্রান্ত ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রধান কার্যালয়ে গত ১ জুন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালায়। ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার (মিসর) থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু বছর না যেতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।

উড়োজাহাজটি সচল রাখার জন্য ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রক্রিয়ায় ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এরপরই তা দুদকে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ওই টিম গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে চিঠি পাঠায়। মাঝে বদলিজনিত কারণে দুদক টিম পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমান উপপরিচালক আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে গঠিত একটি দল অনুসন্ধান করছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.