লেবাননেও শ্রমবাজার খুলছে

expatriates_welfare_minister_nurul_islam_and_lebanese_labour_minister_sejaan_azzi_after_a_bilateral_meetign_in_lebanonবাংলাদেশ থেকে লেবাননে কর্মী নিয়োগে উভয় দেশ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সফররত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও সে দেশের শ্রমমন্ত্রী সিজান আজ্জির উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আগে মন্ত্রী জর্দান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে পোশাক খাতে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। গত ৫ আগস্ট ১০ দিনের সফরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী জর্দান ও লেবানন যান। আজ রবিবার লেবানন থেকে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর এই সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পুরনো এ দু’টি শ্রমবাজার আবার খুলে যাওয়ায় শ্রমবাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার লেবাননের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লেবাননের শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ খাতসহ চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন খাতে কর্মী নেয়ার জন্য একটি এমওইউ স্বাক্ষর করে উভয় দেশ। ১৯৯১ সালে ২৫ নারী কর্মীর মাধ্যমে লেবাননে বাংলাদেশী কর্মী যাওয়া শুরু হয়। এরপর বাজারটি বাড়তে বাড়তে বর্তমানে লেবাননে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশী কাজ করছেন। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৯৫ কর্মী লেবাননে গেছেন। এর মধ্যে গত বছর ১৯ হাজার ১১৮ ও এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৮৫ জন লেবাননে চাকরি নিয়ে যান। এ বছর লেবাননে ১ হাজার ১৭৬ নারী কর্মী গেছেন। দেশটিতে নারী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। পোশাক ও গৃহকর্মী হিসেবে সেখানে নারী কর্মীরা সুনাম অর্জন করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশী প্রতিনিধিদলের এক সদস্য জানিয়েছেন, লেবাননের শ্রমমন্ত্রী সিজান আজ্জির বাংলাদেশী কর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশী কর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। লেবাননের জনগণ বাংলাদেশী কর্মীদের পছন্দ করে। কারণ, বাংলাদেশী কর্মীরা অনেক আন্তরিক। শ্রমমন্ত্রী লেবাননের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশী কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্মার্টকার্ডসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই শেষে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ খাত, চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী, ইলেক্ট্রিশিয়ান, বিক্রয়কর্মীসহ বিভিন্ন খাতে কর্মী নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বিবেচনার জন্য লেবাননের শ্রমমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এ সময় লেবাননের শ্রমমন্ত্রী সিজান আজ্জির বলেন, বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য সে দেশের আইন অনুযায়ী ধার্য করা বেতন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এতে প্রত্যেক কর্মীর বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। লেবাননের শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী নেয়ার পাশাপাশি আরও বেশি পুরুষ কর্মী নেয়ারও আশ্বাস দেন।

বৈঠকে অভিবাসন ব্যয় কমানো, দ্রত কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ, মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সরকারী পর্যায়ে কর্মী প্রেরণ করা যায় কি না, তা নিয়ে সুবিধাজনক সময়ে উভয় দেশের বৈঠক হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার, লেবাননের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার, অতিরিক্ত সচিব আজাহারুল হক, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মুহসিন চৌধুরী ও সিনিয়র সহকারী সচিব শোভা শাহনাজ উপস্থিত ছিলেন। রাতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেন লেবাননের শ্রমমন্ত্রী। বৈঠক শেষে দুই দেশের মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নুহাদ মাশনকের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময় উভয় পক্ষ নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। এর আগে নুরুল ইসলাম বিএসসি লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন। দূতাবাস পরিদর্শনকালে মন্ত্রী বিভিন্ন কার্যক্রম ও সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন। দূতাবাস পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী লেবাননে জাতিসংঘ নিয়োজিত নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস আলী হায়দার পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রীকে নৌ-সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জর্দান সফর শেষে গত ১০ আগস্ট লেবাননে পৌঁছান। লেবাননে বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে লেবাননের শ্রম মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জর্জ আইন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। মন্ত্রী লেবানন সফর শেষে আজ রবিবার দেশে ফিরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.