গুলশানে বিশেষ বাসে তিন গুণ ভাড়া আদায়

aeb4536bb5cfd1bb71424ef97b22c8d8-33বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির নির্ধারিত ভাড়ার তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে গুলশানের ভেতরে চলাচলকারী বিশেষ বাসসেবায়। নিরাপত্তার কারণে গুলশানে অন্য কোনো বাস ঢুকতে না দেওয়ায় যাত্রীরা বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে এসব বাসে উঠছেন। বাস সংখ্যায় কম। যাত্রীর চাপ। ফলে বাসগুলোয় আসনসংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী দাঁড় করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলার পর গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় নিয়মিত যাতায়াতকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত বুধবার থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে এ এলাকার জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ বাসসেবা।
প্রথম দফায় ৩৫ আসনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ১০টি বাস নিয়ে চালু হয়েছে ‘ঢাকা চাকা’ নামের এই বাসসেবা। মোটরগাড়ি সংযোজন ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান নিটল-নিলয় গ্রুপের পক্ষ থেকে বাসগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। বাসসেবা চালুর পর থেকেই এ পথের নিয়মিত যাত্রীরা বাসের ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বাসগুলোতে মূলত চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। তাঁদের অভিযোগ, আগে এ পথে চলা বাসগুলোয় যে দূরত্বের ভাড়া নেওয়া হতো ৫ টাকা, নতুন বাসে তা নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা করে।
গত বৃহস্পতিবার নতুনবাজার থেকে কাকলীগামী বাসের যাত্রী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘লোকাল বাসে যাওয়া যেত ৫ টাকায়। আর নতুন বাসে নিচ্ছে ১৫ টাকা। ভাড়া অনেক বেশি। কিন্তু অন্য বাসে যাওয়ারও তো সুযোগ নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, অনেক কিছু চিন্তা করে গুলশানের মতো কূটনৈতিক পাড়ায় সাধারণ বাস বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। জনগণের চলাচলের অসুবিধার কথা চিন্তা করে কিছু বাস দেওয়া হয়েছে, যার প্রাথমিক ভাড়া রিকশাভাড়ার চাইতেও কম। কিছুদিন বাসগুলো চলার পরে প্রয়োজনে ভাড়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
দুটি রুটে চলছে ‘ঢাকা চাকা’ নামের এই বাসসেবা। একটি রুটের বাস ছাড়ে তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের নাভানা মোড় থেকে। পুলিশ প্লাজা, গুলশান-১ ও রূপায়ন টাওয়ার হয়ে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যায়। আরেক রুটের বাস ছাড়ে কাকলী মোড় থেকে। বনানী বাজার, গুলশান-২ নম্বর হয়ে যাচ্ছে নতুনবাজার।
গুলশান-১-এর শ্যুটিং ক্লাব পয়েন্ট থেকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) রাজধানীতে মিনিবাসের জন্য ভাড়া ঠিক করেছে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসাবে এই পথের ভাড়া আসে ৪ টাকা ৮০ পয়সা। আর কাকলী থেকে নতুনবাজারের ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরত্বের নির্ধারিত ভাড়া ৪ টাকা। তবে মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া হিসেবে এ দুই পথের ভাড়া আসে ৫ টাকা। অথচ ঢাকা চাকার বিশেষ বাসে যেকোনো দূরত্বের ভাড়া ১৫ টাকা হওয়ায় যাত্রীরা মনে করছেন, তাঁদের তিন গুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে।
এই বিশেষ বাসের ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএর পরামর্শ নেওয়া হয়নি। পরিচালনা প্রতিষ্ঠান নিটল-নিলয় গ্রুপ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা মহানগর পুলিশ, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন সোসাইটি মিলে এই ভাড়া নির্ধারণ করেছে। অথচ মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, সারা দেশে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহনের ভাড়া নির্ধারণ করার এখতিয়ার শুধু বিআরটিএর।
বিআরটিএর ভাড়া নির্ধারণবিষয়ক কমিটির সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) প্রবীর কুমার রায় বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বিআরটিএ এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি। পরে সমন্বয় করে ভাড়া ঠিক করা হবে।
গত ১ জুলাইয়ের আগে কাকলী থেকে গুলশান-২, নতুনবাজার পথে রবরব পরিবহন, বিহঙ্গ পরিবহন ও ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির বাস চলত। এই বাসগুলোতে কাকলী থেকে গুলশান-২ ও নতুনবাজারের ভাড়া নেওয়া হতো ৫ টাকা। তবে এসব বাস শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছিল না।
এ বিষয়ে রবরব পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আলী বলেন, ‘গুলশানে হামলার পরে বাস ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু রবরব পরিবহনেরই ৬২টি বাস ছিল। এখন কয়েকটা এসি বাস দিয়ে সিটি করপোরেশন সার্ভিস চালু করল। যাত্রীসংখ্যার তুলনায় এই বাসের পরিমাণ খুবই কম।’
ঢাকা চাকা বাসগুলোতে আসনসংখ্যা ৩৫। তবে গতকাল দেখা যায়, প্রতিটি বাসে অন্তত ১০ জন যাত্রী দাঁড়ানো অবস্থায় নেওয়া হচ্ছে। বিকেলে গুলশান-২ নম্বর থেকে গুলশান-১ নম্বরগামী বাসে সিটসংখ্যার চেয়ে ২২ জন যাত্রী বেশি তুলতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ভিড়ে-গরমে অতিষ্ঠ যাত্রীদের শোরগোলে এতে কিছু সময়ের জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসের দরজা খুলেও রাখা হয়।
জানতে চাইলে নিটল-নিলয় গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিটল-নিলয় বাস বিক্রি করে, পরিচালনা করে না। মেয়র আনিসুল হক ও বিভিন্ন সোসাইটির অনুরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এই বাসগুলো দিয়েছে নিটল গ্রুপ। প্রতিটি বাসের দাম ৪০ লাখ টাকা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসগুলোতে আছে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। সব খরচ মিটিয়ে এখানে লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিশেষ রিকশা মানে না ভাড়ার তালিকা: বিশেষ বাসসেবার পাশাপাশি এ এলাকায় বিশেষ রঙের ৫০০ রিকশাও চালু করা হয়। বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া নির্ধারণ করে বানানো তালিকা হলুদ-কালো রঙের এ রিকশাগুলোয় লাগিয়ে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন ও এসব এলাকার সোসাইটিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, এসব বিশেষ রিকশা ছাড়া অন্য রিকশা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এই বিশেষ রিকশাগুলোর মালিক আগের গ্যারাজ মালিকেরাই। সোসাইটিগুলো শুধু এগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে।
গতকাল শনিবার দেখা যায়, এই এলাকাগুলোতে আগের মতোই সাধারণ রিকশা চলছে। হাজারো সাধারণ রিকশার ভিড়ে বিশেষ রিকশা চোখ পড়ে কদাচিৎ। বিশেষ রিকশার পেছনে সাঁটানো ভাড়ার তালিকা যাত্রীরা দেখছেন না। সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ১৫ টাকা। গুলশান-১ গোলচত্বর থেকে গুলশান-২-এর ভাড়া ২০ টাকা। তবে অন্যান্য সাধারণ রিকশার মতো বিশেষ রিকশার চালকেরাও এ দূরত্বে ২৫ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে গুলশান সোসাইটির মহাসচিব ওমর সাদাত বলেন, ৫০০ রিকশার সবগুলো এখনো নামানো সম্ভব হয়নি। তাই সাধারণ রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। অনেকেই অভিযোগ করছেন, অন্য রিকশাই বেশি, বিশেষ রিকশাও ভাড়া মেনে চলছে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি বিশেষ রিকশাগুলো নামলে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.