ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা

1471384569বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ৬ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে। তিন দেশের ১৩টি রুট ধরে এই পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে মিয়ানমার ও ভারত থেকে গ্যাস আমদানির পথ বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি ত্রিদেশীয় জ্বালানি সহযোগিতা গতিশীল হবে।

বর্তমানে চীন, ভারত ও থাইল্যান্ডে গ্যাস রপ্তানি করছে মিয়ানমার। গ্যাস সংকটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশও বেশ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানির চেষ্টা করছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। আবার গত এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছেও ভারত থেকে গ্যাস আমদানির দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ভারতের অয়েল এন্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি) বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ৬ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের ঘোষণা দেয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে একটি এলপিজি প্লান্ট (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস কারখানা) নির্মাণে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে (এমওইউ) বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল)। তখন দ্বি-পাক্ষিক এক বৈঠকে ভারতের ওড়িষ্যা থেকে তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) খুলনায় সরবরাহ এবং ভবিষ্যতে এ গ্যাস রংপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গে সঞ্চালনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ওই সময় ত্রিপুরার পালটানা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিরও প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। তখন ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে গ্যাস রপ্তানির বিষয়টি ভারতে ফিরে গিয়েই সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করব। উদ্বৃত্ত থাকলে সরবরাহের ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি থাকবে না। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের গ্যাস আমদানির ব্যাপারেও ভারতের আপত্তি নেই।

সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই গ্যাস আমদানিসহ তেল বিক্রি ও সার্বিক জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে বেশকিছু নীতিগত প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই নতুন ত্রিদেশীয় পাইপলাইন নির্মাণের ঘোষণা এলো ভারতের পক্ষ থেকে। গত ১৪ আগস্ট ভারতের ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওএনজিসি’র নির্বাহী পরিচালক এস সি সনিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পশ্চিমের রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করে ৬ হাজার ৯০০ কিলোমিটারের একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। ২০৩০ সালের জ্বালানি রূপকল্প বাস্তবায়নে মিয়ানমারের সিত্তে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং উত্তরপূর্বের অধিকাংশ রাজ্য, শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরকে সংযুক্ত করে পাইপলাইনটি নির্মিত হবে। তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে বিশাল পরিমাণ গ্যাস পুড়ে যায়। গ্রাহকদের কাছে পাইপের মাধ্যমে এই গ্যাস নেওয়া যায় না। তাই এই উদ্বৃত্ত গ্যাস অন্য কোনো উপযুক্ত স্থানে উত্পাদনমুখী উদ্দেশ্যে সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এস সি সনি বলেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস, এলপিজি এবং ডিজেল পরিবহন-সরবরাহে পাইপলাইন স্থাপনের বিষয়ে শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম বৈঠকটি গত সপ্তাহে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকটি চলতি বছরের শেষ দিকে আগরতলায় অনুষ্ঠিত হবে। ১৩টি পথে এই পাইপলাইনটি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.