ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫ : পর্যটন শিল্পের বিকাশে দেশের যে কোনো স্থানে তিন তারকা মানের (থ্রি স্টার) আবাসিক হোটেল নির্মাণ করতে চাইলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা মানতে হবে।
তবে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ধরনের সুবিধা রাজধানীর বাইরে পর্যটন এলাকাগুলোয় পর্যাপ্ত দেওয়া উচিৎ ছিল। ঢাকাতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন পর্যাপ্ত সংখ্যক আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেগুলো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছে না। এ শুল্ক রেয়াত সুবিধা দেওয়ার ফলে অনেকেই ঢাকার ভেতরে তিন তারকামানের হোটেল তৈরিতে উৎসাহিত হবেন। ফলে যারা শুল্ক রেয়াত সুবিধা নিয়ে হোটেল তৈরি করবেন। ফলে তাদের সঙ্গে ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল পর্যটন শিল্পের বিকাশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেলের শাখা ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হোটেল নির্মাণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা দিয়ে এসআরও জারি করা হয়। এ অনুযায়ী ৩০টি হেডিংভুক্ত ৬৪টি পণ্য আমদানি করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেলের নিয়ন্ত্রক ইব্রাহিম খলিল দ্য রিপোর্টকে জানান, পর্যটন শিল্পের হোটেল খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ এপ্রিল এসআরও জারি করে এনবিআর। এসআরওর মাধ্যমে আবাসিক হোটেল তৈরির যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর এনবিআর থেকে পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী নীতিমালাও তৈরি হয়েছে।
হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেলের নিয়ন্ত্রক আরও বলেন, ‘যে সব হোটেল শুল্ক রেয়াত সুবিধা পাবে সেগুলো চিহ্নিত করতে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির কাজ হচ্ছে— সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে রিপোর্ট তৈরি করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকার ভেতরে নীতিমালার আলোকে হোটেল তৈরি করলে ব্যবসায়ীরাও শুল্ক রেয়াতী সুবিধা পাবেন।’
হোটেল পর্যবেক্ষণে কমিটি : নির্মিতব্য আবাসিক হোটেলের মান যাচাইয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হোটেল ও রেস্তোরাঁ শাখার নিয়ন্ত্রককে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মনোনীত মহাব্যবস্থাপক (প্লানিং এ্যান্ড ওয়ার্কস), সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মনোনীত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পর্যায়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রতিনিধি, ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেল সহকারী নিয়ন্ত্রক। এ কমিটি ছাড়পত্র দিলেই শুল্ক রেয়াত সুবিধা নিয়ে যন্ত্রপাতি আমদানি করা যাবে।
সুবিধা পাওয়ার শর্ত : নির্মিতব্য হোটেল সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। অনুমোদিত প্লান অনুসারে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ ভৌত বা পূর্ত অবকাঠামো নির্মাণ না হলে শুল্ক কর সুবিধার জন্য আবেদন করা যাবে না। এ ছাড়া অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা তিন তারকা (থ্রি-স্টার) মানের হতে হবে। হোটেলের জন্য অনুমোদিত পণ্য শুধুমাত্র একবার আমদানি করা যাবে। আমদানি করা পণ্য খালাসের ছয় মাসের মধ্যে হোটেলে ব্যবহার করাতে হবে। তা না হলে বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত হারে জরিমানাসহ শুল্ককর দিতে হবে।
হোটেলে যে সব ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন : হোটেলে এয়ার কন্ডিশন ও হিটিং ব্যবস্থা, সংযুক্ত বাথরুমসহ কমপক্ষে ১০০টি কক্ষ থাকতে হবে। বাথরুমসহ রুমের আয়তন হতে হবে ২৬ বর্গমিটার। বর্জ্য শোধনাগার প্লান্টসহ (এসটিপি) প্রয়োজনীয় সংখ্যক লিফট থাকতে হবে। কক্ষে ঠাণ্ডা ও গরম পানি, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। ন্যূনতম ৫০টি গাড়ির জন্য নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এ ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৫০ আসনবিশিষ্ট সভাকক্ষ, ২০০ আসনবিশিষ্ট সম্মেলন কক্ষ, ১৫০ আসন বিশিষ্ট ব্যাঙ্কুয়েট হল, ৫০ আসনবিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট থাকতে হবে। অভ্যর্থনা কক্ষ, লাউঞ্জ ও লবি, জিমনেসিয়াম, সনা, স্টিম বাথ, স্পা, মানসম্মত লন্ড্রি ও সেলুন থাকতে হবে।