ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের কারখানায় সদ্য উৎপাদিত হয়েছে বোয়িং ৭৪৭ বিমান

অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদিত হওয়ার পর, মঙ্গলবার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের কারখানা থেকে সর্বসাম্প্রতিক বোয়িং ৭৪৭ বিমানটি বেরিয়ে আসে।

১৯৬৯ সালে প্রথম উড্ডয়নের পর থেকে, জাম্বো জেট হিসেবে পরিচিত ৭৪৭ বিমানটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়েছে – পণ্যবাহী কার্গো বিমান হিসেবে, প্রায় ৫০০ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম বাণিজ্যিক বিমান হিসেবে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিমান বা এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে। বোয়িং ৭৪৭ বিমানটি বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমান এবং এমন প্রথম বিমান যার ভেতরের আসনের মাঝে দুইটি আইল বা চলাচলের পথ রয়েছে। বিমানটি এখনও অন্যান্য বেশিরভাগ বিমানের তুলনায় বড়।

বিমানটি দ্বিতল বিশিষ্ট, অর্থাৎ তাতে একটি দ্বিতীয় ডেক রয়েছে , যেটি ককপিট থেকে আরম্ভ করে এক-তৃতীয়াংশের কিছুটা পেছন পর্যন্ত বিস্তৃত আছে । এই কারণে বিমানটিতে অনন্য একটা কুঁজ দেখা যায় যা কিনা বিমানটিকে একনজরেই চেনা সম্ভব করে তোলে। এমন আকারের কারণে বিমানটির ডাকনাম ছিল ‘দ্য হোয়েইল’ বা তিমি মাছ। তবে, মার্জিত মহলে সেটিকে ‘কুইন অফ দ্য স্কাইস’ বা আকাশের রানী বলে ডাকা হয়।

প্রথম ৭৪৭টি তৈরি করতে বোয়িং এর ৫০,০০০ কর্মীকে ১৬ মাসের কিছুটা কম সময় ব্যয় করতে হয়। তখন থেকে আরম্ভ করে বোয়িং এখনও পর্যন্ত আরও ১,৫৩৭টি ৭৪৭ তৈরি করেছে।

তবে, বিগত ১৫ বছরের মত সময়ে বোয়িং ও তাদের ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাস নতুন নতুন মডেলের ওয়াইড বডি বা প্রশস্ত বিমান তৈরি করেছে, যেগুলো ৭৪৭ এর চারটির বদলে মাত্র দুইটি ইঞ্জিন ব্যবহারেই উড্ডয়নে সক্ষম। নতুন এই বিমানগুলো আরও অধিক জ্বালানী সাশ্রয়ী এবং লাভজনক।

যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে ডেল্টা এয়ারলাইন্স সর্বশেষ ৭৪৭ ব্যবহার করতো। ২০১৭ সালে বিমানটি ব্যবহার করে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয় এয়ারলাইন্সটি। তবে, অন্যান্য আরও কিছু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স এখনও যাত্রী পরিবহনে ৭৪৭ ব্যবহার করছে। এদের মধ্যে জার্মানীর লুফথানসাও রয়েছে।

৭৪৭ এর সর্বশেষ ক্রেতা ছিল পণ্যবাহী অ্যাটলাস এয়ার। তারা এ বছরের শুরুর দিকে চারটি ৭৪৭-৮ পণ্যবাহী বিমানের ক্রয়াদেশ দেয়। সেগুলোর সর্বশেষটিই মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের এভারেট-এ অবস্থিত বোয়িং এর বিশাল কারখানাটি থেকে বের হয়ে আসে।

বোয়িং এর গোড়াপত্তন হয়েছিল সিয়াটল এলাকায়। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য এবং সাউথ ক্যারোলাইনায় কোম্পানীটির সংযোজন কারখানা রয়েছে। মে মাসে কোম্পানীটি ঘোষণা দেয় যে, তারা তাদের সদর দফতরটি শিকাগো থেকে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্লিংটন-এ স্থানান্তর করবে।

ওয়াশিংটন ডি.সি. এলাকায় স্থানান্তরিত হলে কোম্পানীটির নির্বাহীরা কেন্দ্রীয় বা ফেডারেল সরকারের কর্মকর্তা ও ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর আরও কাছাকাছি অবস্থান করতে পারবেন। এফএএ বোয়িং এর যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী বিমানগুলোকে চলাচলের অনুমতি দেয়।

বোয়িং এর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুর্ঘটনায় পড়ার পর থেকে, বোয়িং এর সাথে এফএএ’র সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এফএএ প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগিয়ে, প্রায় দুই বছর পর ঐ মডেলের বিমানগুলোর নকশা পরিবর্তনের ও সেগুলোকে পুনরায় উড্ডয়নের অনুমোদন দিয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.