বোয়া ফোরামে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন ইফফাত হোসেন

iffatবিশেষ প্রতিনিধি: নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের পর এই প্রথম কোন বাংলাদেশী বোয়া ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলণে প্রথম দিনের একটি সেমিনারে বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সৈয়দা ইফফাত হোসেন। ইফফাত এর আগে এই বোয়া ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিলেও এবারই এই ধরনের একটি অবস্থানে সম্মলনের প্রথম দিনেই একটি সেমিনারে বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছেন। এটা তাকে আগামী দিনে আরো উৎসাহিত করবে ও পথ চলতে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি তরুণ প্রজšে§র প্রতিনিধি হিসাবে সেখানে যোগ দিবেন ও বক্তৃতা করবেন। এর আগে ২০১৪ সালে এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে বোয়া ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মলনে তরুণ প্রতিনিধিদের মধ্যে তিনি সেরা বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এর আগে ২০০৭ সালে বিএফএ’র বার্ষিক সম্মেলনে ড. মুহম্মদ ইউনূস-কে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। তিনি তার সফর সঙ্গী হিসেবে ডেইলী স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তরুণ সমাজের ভূমিকা নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছরই সৈয়দ আবুল হোসেন বোয়া ফোরাম এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন।

এই বছর এই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট থাকছেন। আরো থাকবেন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। সেই সম্মেলনে বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছেন ইফফাত। এটাকে তিনি ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন।

ইফফাত হোসেন এই ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আমি বাংলাদেশী। বোয়া ফোরাম করার পর আমি এশিয়ান সিটিজেন হলেও এখন নিজেকে গ্লোবাল সিটিজেন মনে করি। বোয়া ফেরামের গুরুত্বপূর্ন একটি অধিবেশনে আমি বক্তা হিসাবে নির্বাচিত হওয়ায় আমার ভাল লাগছে। আমি গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে চাই। তরুণ প্রজš§কে আরো এগিয়ে আসতে হবে। এই জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
তিনি বোয়া ফোরাম ফর এশিয়া এর সদস্য। তিনি প্রতি বছর চায়নায় অনুষ্ঠিত বোয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি হংকংয়ে বিএফএ এর ইয়ূথ ফোরামে অংশ নিয়ে থাকেন। তিনি বর্তমানে গবেষণা ও আরো উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য লন্ডনে সাইক্লোজি বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করছেন। তিনি ব্যবসার কাজে চীন ও বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। সেখানে ২৬ মার্চ ২৭ মার্চ দুই দিন ব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বোয়া ফোরাম ফর এশিয়া অ্যানুয়েল কনফারেন্স ২০১৫ অনুষ্টিত হবে। ২৬ মার্চ সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এই সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে বিকেল পাঁচটা থেকে অনুষ্ঠিতব্য সেশনে তিনি বক্তব্য রাখবেন। ওই সেশনের নামকরণ করা হয়েছে “হোয়াটস আপ উইথ দ্য নেক্সট জেনারেশন”। এটা আইসিসি, লেবেল ওয়ান এর ডং ইউ গ্রান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হবে। ওই সেশনে মডারেটর হিসাবে রয়েছেন পিকিং ইউনিভারসিটির গাং গুয়া স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের ডীন ছাই হং বিন।

এতে আলোচক হিসাবে থাকছেন ছয় জন। তারা বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে আসছেন। ইফফাত হোসেন ওই সেশনের বক্তৃতা করবেন। এছাড়াও তিনি পুরো সম্মেলনেই যোগ দিবেন। উল্লেœখ্য, তিনি বোয়া ফোরামে বাংলাদেশের সদস্য হিসাবে বর্তমান চীন রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আসার পর তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং কে তিনি হোস্ট হিসাবে ইন দি ক্যাপাসিটি মেম্বার অব দ্য বোয়া ফোরাম এশিয়ার সদস্য হিসাবে রিসেপশনও দেন।

এবারের বোয়া ফোরামের এই সম্মেলন নানা দিক থেকেই গুরুত্ববহন করে। কারণ সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধানগণ যোগ দিবেন। এছাড়াও সেখানে যোগ দিবেন অনেক রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞরাও থাকছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, চীনের সাবেক ভাইস প্রিমিয়ার, মালয়েশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, কোরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী যোগ দিবেন। চীনের প্রধান বিচারপিত ছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রধান বিচারপতিগণ যোগ দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা যোগ দিবেন। এরমধ্যে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও বাংলাদেশ থেকে যোগ দিবেন ওই সম্মেলনে। এর আগে তিনি একাধিবার ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ইফফাত হোসেনের ব্যাপারে জানা গেছে, সৈয়দা ইফফাত হোসেন একজন তরুণ বাংলাদেশী। একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করলেও ব্যবসা খাতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এরমধ্যে বিদ্যু খাত, উন্নয়ন মূলক খাত ও শেয়ার ব্যবসাও রয়েছে। এছাড়াও ফাইন্যান্স সেক্টরেও তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন চ্যারিটি ও সামাজিক সচেতনামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এই ধরনের একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সৈয়দ ইফফাত হোসেন সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কর্পোরেট ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।

তার পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইফফাত হোসেন ১১ মার্চ ১৯৮৪ সালে ঢাকায় জš§ গ্রহণ করেন। তিনি তার লেখা পড়া জীবনে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তিনি জর্জিয়ার আলন্টায় অবস্থিত এমোরি ইউনিভারসিটি থেকে মনোবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করেন। এরপর তিনি একই বিষয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান থেকে দ্য স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চ ইন ম্যানহাটান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সাইক্লোজিক্যাল গবেষণামূলক প্রকল্পে কাজ করেন। ইফফাত হোসেন অনেক আগে থেকেই কাজ করেন কর্পোরেট স্কোর ও উন্নয়নমূলক খাতে। কারণ তিনি তাদের পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ২০০১ সালে তিনি সাকো ইন্টারন্যাশনাল এর কর্পোরেট ডাইরেক্টর হিসাবে কাজ করছেন।

সাকো ইন্টারন্যাশনালের উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত হয়ে দেশের সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি সাকো সিকিউরিটিজ নামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অধিভুক্ত একটি ব্রোকার হাউজের সঙ্গে জড়িত।
তিনি পশু পাখির জন্য কাজ করেন বাংলাদেশ এ্যানিমেল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির মাধ্যমে। তারা পশু পাখি রেসকিউ করা ছাড়াও হেলথ কেয়ার নিয়ে কাজ করেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে (www.boaoforum.org).

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.