দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ রাত ৯টায় কাতার বিশ্বকাপের স্বপ্নের ফাইনালে এমবাপ্পের ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে মেসির আর্জেন্টিনা। লড়াইটা ইউরোপ বনাম লাতিন আমেরিকারও। ২০০২ সালে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত চার আসরে ইউরোপের দলগুলোই ঘুরেফিরে বিশ্বকাপ জিতেছে।
দুই ফাইনালিস্টের সামনেই এবার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। ফ্রান্স নামবে তৃতীয় দল হিসাবে টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়ার লক্ষ্য নিয়ে। আর আর্জেন্টিনা নামবে বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের শিরোপাখরা ঘোচানোর লক্ষ্য নিয়ে। সেই ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর পেরিয়ে গেছে আটটি আসর। শিরোপা আর জেতা হয়নি তাদের।
সেই আক্ষেপ ও মেসির আজন্ম হাহাকার ঘোচাতে প্রয়োজন শুধু একটি জয়। তার বাঁ পায়ের জাদুতে লেখা হয়েছে শয়ে শয়ে গল্প। সমকাল ছাপিয়ে সর্বকালের সেরার প্রশ্নে শুধু একটি জায়গায় আটকে যান মেসি। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা রয়ে গেছে অধরা। সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে ৩৫ বছর বয়সি আর্জেন্টাইন মহাতারকা এবার জাদুকরী পারফরম্যান্সের পসরা মেলে ধরেছেন কাতারে। ফাইনালের আগে করেছেন পাঁচ গোল, করিয়েছেন তিনটি।
ট্রফির পাশাপাশি গোল্ডেন বল ও বুটেরও হাতছানি তার সামনে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটও দমাতে পারছে না মেসিকে। বিশ্বকাপ অধ্যায়ের সমাপ্তি টানতে চান তিনি শিরোপা জিতেই, ‘এটা আমার সেরা বিশ্বকাপ হবে কি না জানি না। তবে শিরোপা জিততে যা যা করা দরকার, সবই করব। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আর্জেন্টিনার এই দলটা দুর্দান্ত।’
ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর ফরাসি দৈনিক লেকিপের শিরোনাম ছিল, ‘বিশ্বসেরার ব্যাটন এমবাপ্পের হাতে তুলে দিলেন মেসি।’
সেই ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপ্পে করেছিলেন জোড়া গোল, লিওনেল মেসি ছিলেন গোলবিহীন। টিএজার (১৯ বছর বয়স) এমবাপ্পে সেবার তারুণ্যের ঝলকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেন ফ্রান্সকে।
এরপর কেটে গেছে সাড়ে চার বছর। মেসি জিতেছেন আরও দুটি ব্যালন ডি’অর। কিন্তু ২৪ ছুঁই ছুঁই এমবাপ্পে আজও পাননি বিশ্বসেরার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের মীমাংসার জন্যই হয়তো ফুটবল বিধাতা এবার সবচেয়ে বড় মঞ্চে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই বিশ্বসেরাকে।
আলভারেজ, মার্তিনেজ, দি পলরা যেন পণ করেছেন, ‘মেসি’ নামের রূপকথার শেষটা কিছুতেই বিয়োগান্তক হতে দেবেন না। আসলে বিশ্বজুড়েই রব উঠেছে, ট্রফিটা এবার মেসির প্রাপ্য। তবে আবেগ একপাশে সরিয়ে রাখলে জোর গলায় কেউ বলতে পারবেন না যে, ট্রফিটা ফ্রান্সের প্রাপ্য নয়। চোটজর্জর দল নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার তাদের ফাইনালে উঠে আসার গল্পটাও কম রোমাঞ্চকর নয়।
পিএসজি সতীর্থ মেসির মতো এমবাপ্পেও করেছেন পাঁচ গোল। আড়ালের নায়ক জিরুর গোল চারটি। প্লেমেকারের ভ‚মিকায় নীরবে আলো ছড়াচ্ছেন গ্রিজমান। এতদূর এসে তাই শূন্য হাতে ফিরতে নারাজ ফরাসি ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বেলে, ‘অবশ্যই বিশ্বকাপ মেসির প্রাপ্য। এই একটি ট্রফিই শুধু তার অধরা। তবে ফ্রান্সেরও প্রাপ্য বিশ্বকাপ। আমরা আমাদের দেশকে গর্বিত করতে এখানে এসেছি। আশা করি, আমরাই প্রাপ্যটা বুঝে পাব।’
ফাইনালের আগে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমকে ভাবিয়ে তুলেছে, দলে ফ্লুর সংক্রমণ। অন্তত দলের পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন ভাইরাসে। কাল সংবাদ সম্মেলনে দেশম জানালেন, ‘সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা না হলেই ভালো হতো। এখন আমাদের চেষ্টা সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতি নিয়েই ফাইনালে নামা।’