এভিয়েশন নিউজ : (৪ মার্চ, ২০১৫) লন্ডনস্থ বিমানের হোটেলে ‘না’ আধ্যক্ষরের এক কেবিন ক্রুর ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। বিমান সুত্রে জানাগেছে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সংস্থার চীফ পার্সার মোঃ নুরুজ্জামান রনজু ও স্টুয়ার্ড অপুক মুমের সিনহার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বিমান। এই অভিযোগে তদন্তকারী সংস্থা তাদের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। বিমানের লিগ্যাল শাখা সুত্রে জানাগেছে এধরনের অভিযোগে সর্বনিš§ শাস্তি (লঘু দন্ড) হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদ এক গেড নিচে নামিয়ে দেয়া ও জরিমানা করা।
আর সর্বোচ্চ শাস্তি চাকরীচ্যুত। তবে বিমান ম্যানেজমেন্ট এই ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে রহস্যজনক কারণে লঘুদন্ড দিয়ে অভিযোগটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাঁধ সেধেছে সিনহাকে নিয়ে। কারণে সিনহা হচ্ছে গ্র“প -৪ এর একজন স্টুয়ার্ড। তার নিচে আর কোন গ্র“প নেয়। কাজেই তাকে ডিমোশন করার সুযোগ নাই। এই অবস্থায় বিমানের প্রশাসন শাখা পড়েছে বিপাকে। বিমানের প্রশাসন শাখা সুত্রে জানাগেছে প্রাথমিক তদন্তে রনজু ও সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাদের চার্জশীট করা হয়েছে। তাদের দুজনেরই অভিযোগ সমান ও গুরুতর। কাজেই শাস্তি মওকুফের কোন সুযোগ নেই। উল্টো দুজনের একই শাস্তি হবে। জানাগেছে আগামী কিছু দিনের মধ্যে তাদের শাাস্তি দেয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত করবে বিমান।
যদিও তদন্তকারী একটি গ্র“প নানা চেষ্টা তদবির করে অভিযুক্ত দুই পুরুষ কেবিন ক্রুকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন ও বোর্ডের বেশ ক‘জন সদস্যের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ আছে অভিযুক্ত দুই কেবিন ক্রু বিমানের বোর্ড মেম্বার মেজবাহ উদ্দিনকে ধরে আইনের মারপ্যাচে ফেলে নানাভাবে নিজদের নির্দোষ প্রমান করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বোর্ড মেম্বার মেজবাহ উদ্দিন তাদের কথায় সায় দেননি। একই সঙ্গে বিমানের ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি চীফ ইন্সট্রাকটর ও প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা ডালিয়া, প্রধান ডাক্তার (সিএমও) ডাক্তার তাসলিমা, লিগ্যাল শাখার একজন মহিলা কর্মকর্তাসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই দুই অভিযুক্তকে বাঁচানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা তদবির করেছিল।
অভিযোগ আছে দুই অভিযুক্ত রনজু ও সিনহা নিজদের রক্ষার জন্য ওই ফ্লাইটের অধিকাংশ স্টুয়ার্ড ও স্টুয়ার্ডনেসকে নানাভাবে কিনে নেয়ারও চেষ্টা করেছিল। যার কারণে তন্তকারী সংস্থার কাছে ওই কেবিন ক্রুদের অনেকে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে সাক্ষ্য দিয়ে রনজু ও সিনহাকে বাচানোর চেষ্টা করেছিল। রনজুর মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পরীক্ষা করে তদন্তকারী সংস্থা এর প্রমান পেয়েছে বলে জানাগেছে।
এছাড়া ভিকটিম কেবিন ক্রুকে চাকরীচ্যুত করা, তাকে আনফিট করা ও ফ্লাইট না দিয়েও ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বিমানের শীর্ষ মহলের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে সেটাও সম্ভব হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, প্রথম দফায় নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং করে ডালিয়া কোন তদন্ত না করেই ভিকটিম কেবিন ক্রুর ওপর কোন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলেও রিপোর্ট দিয়েছিল। পরবর্তীতে বিমান পরিচালণা পর্যদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিমানের পরিচালক প্রশাসন রাজপতি সরকারকে লিখিতভাবে জানান। এরপরই প্রশাসন বিভাগ থেকে ডালিয়ার তদন্ত রিপোর্টটি প্রত্যাখ্যান করে তাকে তদন্ত কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
একই সঙ্গে নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এধরনের ভয়াবহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না করেই মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট একপেশে তদন্ত রিপোর্ট তৈরী করে ডালিয়া রাস্ট্রীয় পতাকা খচিত বিমানকে কলঙ্কিত করেছে। এই কারণে দুই অভিযুক্তের পাশাপাশি ডালিয়ার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
নাম প্রকাশ না করে লিগ্যাল শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, বিমানে প্রতিনিয়ত এধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আসছে। কিন্তু ভিকটিমদের অভিযোগ না থাকায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এই প্রথম একজন ভিটকটি সাহসিকতার সঙ্গে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে কেঁচো খুড়তে সাফ বেরিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা ভিকটিমকে নানা ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। তাকে দিয়ে মামলা তুলে নেয়ারও চেষ্টা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টায় কেউ সফল হয়নি। বিষয়টি বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ও সাবেক বিমান বোর্ড সদস্য আবুল কালাম আজাদ, চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনসহ সব বোর্ড মেম্বারদের অবহিত করা হয়। কাজেই অভিযুক্তরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিচার হবে।
জানাগেছে ভিকটিম কেবিন ক্রুকে ঘায়েল করার জন্য প্রথম দফায় কৌশলে তাকে আনফিট দেখিয়ে বিমানের প্রধান ডাক্তার (সিএমও) ফ্লাইট না দেয়ার জন্য সুপারশ করেছিল। এইক্ষেত্রে ভিকটিমকে ‘ফিট’ বলা হলেও ওই সার্টিফিকেটে কোন তারিখ না থাকায় সিডিউল বিভাগ তাকে কয়েকদিন ফ্লাইট পর্যন্ত দেয়নি। জানাগেছে অভিযুক্তদের মধ্যে চীফ পার্সার রনজু আগামী কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন। একারণে তাকে কৌশলে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে সবাই।
গত ২৫ ডিসেম্বর বিমানের ক্রুদের থাকার জন্য ভাড়া করা লন্ডনস্থ হোটেলে বিমানের দৈনিক ভিত্তিতে নিযুক্ত (না) অধ্যাক্ষরের একজন কেবিন ক্রু যৌন হয়রানির শিকার হন। বিমানের একজন চীফ পার্সার ও একজন স্টুয়ার্ড ওই কেবিন ক্রুকে তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করে। অভিযুক্ত দুজন হলেন, চীফ পার্সার মোঃ নুরুজ্জামান রনজু ও স্টুয়ার্ড অপুক মুমের সিনহা। অভিযোগ রয়েছে এই ঘটনার পর মোটা অংকের টাকা দিয়ে অভিযুক্তরা ওই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যন্ত গায়েব করে দেয়।