মালয়েশিয়া: সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে প্রতিবছর মালয়েশিয়াতেও জমে ভালোবাসা দিবস। এবারের ভালোবাসা দিবসকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে
দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি দম্পতিদের ‘একান্ত আড্ডা’ আযোজন করে।
এ ‘একান্ত আড্ডা’য় মালয়েশিয়ায় একঝাঁক প্রবাসী বাংলাদেশি নবদম্পতি যোগ দেন।যারা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করে মালয়েশিয়ায় রযেছেন ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বা
পড়ালেখা বা চাকরির জন্য। এসব দম্পতির সবাই বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা দিয়ে পুরো বিশ্বকে জয় করা সম্ভব।
পাভেল ও সোমা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র মহসিন সিকদার পাভেল।গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরের লৌহজং থানায়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে চলে আসেন মালয়েশিয়ায়। এরপর থেকে নিয়মিত দুই দেশেই ব্যবসা করছেন তিনি।
পাভেল জানান, বাংলাদেশের বাইরে অনেক দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে।কিন্তু প্রেমে পড়েছেন মালয়েশিয়ার।তবে ভালোবাসার মানুষটি খাঁটি বাংলাদেশি। ফারজানা সোমা পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দা।
ভালোবাসার মানুষ ফারজানা সোমাকে তিনি কাব্যিক ভাষায় উপস্থাপন করেন।‘হিমালয়ের তুষার শুভ্রতার অন্তরালে জমে ছিল নাম না জানা এক পাহাড়ি ফুল, আকাশের সঙ্গে চলে তার অবাধ মিতালি। স্বচ্ছ নদীর স্রোতধারায় এঁকে যায় ভালোবাসার পরশ, সেই শিশির স্নিগ্ধ ফুলটির নাম সোমা।যার ভালোবাসায় আজ আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
ঢাকার কেরানিগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ কমান্ডারের মেয়ে সোমা। বিয়ে করেছেন ২০০৫ সালে।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন সোমা।
সোমা ও পাভেল কুয়ালালামপুরের বুকিট জলিল-এ বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এক আত্মীয়ের বিয়েতে তাদের প্রথম দেখা হয়।প্রথম দেখাতে সোমাকে ভালো লেগে যায় পাভেলের।
সোমা বলেন, সত্যি আমি পাভেলকে পেয়ে খুব খুশি। ভালোবাসা আল্লাহর দান।কখন কার উপর ভালোবাসা জন্মায় তা শুধু বিধাতা জানেন।
রাজু ও মৌসুমী
মোস্তফা এমরান রাজু পেশায় একজন সাংবাদিক। বাংলাদেশি এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি।ভালোবেশে বিয়ে করেছেন মৌসুমীকে। কিন্তু পড়ালেখার জন্য চলে আসতে হয় মালয়েশিয়ায়।
রাজু জানান, ভালোবাসার মানুষকে রেখে প্রবাসে একা থাকা খুব কষ্টের। তাই মৌসুমীকে কয়েকদিনের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসবেন। ভালোবাসা দিবসে রাজু সত্যি মৌসুমীকে খুব মিস করেন।
২০০৭ সালে মোবাইল ফোনের মিসকলের মাধ্যমে পরিচয় হয় তাদের।প্রথমে ঝগড়া, পরে বন্ধুত্ব এরপর প্রেম ও বিয়ে। খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজু আর মৌসুমি দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী।
রাজু জানান, ক্যাম্পাসে ঝাল-মুড়ি আর বাদামের সঙ্গে আড্ডা, পুকুর পাড়ে সময় কাটানো, ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে হেঁটে হেঁটে সূর্যাস্ত উপভোগ করা, সবকিছুর মধ্যে ছিল অন্যরকম এক ভালোলাগা।
২০১০ সালে রাজু চলে আসেন ঢাকায়।চাকরি হয় বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভিতে।এর তিন বছর পর ২০১৩ সালের ১৭ মার্চ পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ে করেন।
রাজু জানান, সংসারের সব সিদ্ধান্ত দুজনে মিলেই নেন।সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান কখনও সমুদ্র কখনও পাহাড় দেখতে।ভালোবাসা দিবসে বাংলানিউজের মাধ্যমে স্ত্রীকে একগুচ্ছ গোলাপের শুভেচ্ছা জানান রাজু।
তানজিমা ও নাসিফ
তানজিমা বলেন, ভালবাসা মানে শুধু প্রাপ্তি নয়, ভালবাসার মানে হলো সেই মনের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা।এটি হচ্ছে অনুভূতির বিষয়।এই অনুভূতি সারা জীবন মনের মধ্যে থাকে।আমি এখনও আমার স্বামীকে অনেক বেশি ভালোবাসি এবং সারা জীবন ভালোবাসবো। আমি প্রতিটি মুহূর্ত তাকে অনুভব করি।তিনি যেন আমার সঙ্গেই রয়েছেন।
তানজিমা বিয়ে করে স্বামী নাসিফকে নিয়ে মালয়েশিয়া চলে আসেন ২০১৩ সালে। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।
তানজিমা জানান, তখন যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি।তাকে আমার দেখতে ইচ্ছে হলে বাসার বারান্দায় দাঁড়াতাম, যখন সে বাসা থেকে বের হতো সেই সময়।আমাদের কাছে প্রতিটি দিনই ছিল ভালোবাসা দিবস। এক পর্যায়ে পরিবারের মতের বিরুদ্ধে তারা বিয়ে করেন।
রুবেল ও জয়া
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বাংলাদেশের মত হওয়ায় মালয়েশিয়াই প্রথম পছন্দ রুবেলের। ছোটখাট ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রুবেল।ভালোবেসে বিয়ে করেন সিরাজগঞ্জের জয়াকে।২০১০ সালে গাজীপুরের কাপাসিয়ার রুবেল স্ত্রী জয়াকে নিয়ে পাড়ি দেন মালয়েশিয়ায়।জয়া মালয়েশিয়ায় ইংরেজি ডিপ্লোমা কোর্সে পড়ালেখা করছেন। প্রবাসে পড়াশোনার পাশাপাশি স্বামী রুবেলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
জয়া বলেন, স্বামীর ভালোবাসায় দেশের কষ্ট ভুলে যানG ভালোবাসা দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান, তিনি।
রিজভী ও মিতুল
গোপালগঞ্জের এই দম্পতি বলেন, আসলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যদি এই রকম ভালোবাসা থাকত তাহলে সবাই সুখী হতো।ভালোবাসা দিবসে সবাই সুখী হোক এই প্রতাশা করেন তারা।