রমজানে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজারে পর্যটকের দেখা নেই। আগে রমজানে কমবেশি পর্যটক অবস্থান করলেও এবারের রোজা তীব্র দাবদাহে পড়ায় গরমের ভয়ে উল্লেখ করার মতো পর্যটক কক্সবাজার আসেনি।
তবে কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদারের মতে, শবে কদর থেকে টানা ছুটি পড়লেও ব্যবসা হবে মূলত ঈদের পরদিন থেকে। সরকারি ছুটি পর্যন্ত অবস্থান করবেন সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীরা। এরপর পরবর্তী শনিবার পর্যন্ত কক্সবাজার অবস্থান করতে পারেন ভ্রমণপিয়াসীরা। এ কদিনে লাখো পর্যটক অবস্থান করলে এবং সাতদিন টানা ব্যবসা জমলে ৩০০-৪০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা ও সেবায়।
আবুল কাসেম সিকদার বলেন, এরই মধ্যে অনেক পর্যটক ঈদে বেড়াতে হোটেল-মোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করবেন আশা করা যায়। ফেডারেশনভুক্ত আবাসিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, তারকা হোটেলগুলো সারাবছরই একই নিয়মে সেবা দিয়ে থাকে। তবে, সময়ভেদে রুমভাড়ায় ডিসকাউন্ট কমবেশি হয়। এবারের ঈদে আমরা সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। কেউ প্যাকেজ নিয়ে এলে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাচ্ছেন। পৃথকভাবে এলে রুমভাড়ায় ২৫-৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাচ্ছেন পর্যটকরা।
স্যান্ডি বিচ রেস্তোরাঁর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, বৈশাখের দাবদাহ থাকলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার—এমনটি আশা সবার। পর্যটকদের সার্বিক সেবা দিতে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
হোটেল দি কক্স টুডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে অন্য বছরের মতো এবারও তৈরি আমরা। পরিচ্ছন্ন আবহই পাবেন পর্যটকরা। সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি।’
ছুটিকে কেন্দ্র করে জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পট সাজানো হচ্ছে।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক (ইনচার্জ) মাজহারুল ইসলাম বলেন, পার্কের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাফারি পার্ক।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে ভয়াবহ গরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। কক্সবাজারেও এর ব্যত্যয় নেয়। এরপরও উল্লেখ করার মতো পর্যটক ঈদে বেড়াতে আসবে সেটা কাম্য।
তিনি বলেন, গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক সপ্তাহখানেক সময় কক্সবাজার অবস্থান করলে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেক্টর মিলে ৩৫০-৪২০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাণিজ্য হতে পারে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, পর্যটক আগমন বাড়বে মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে কয়েকটি ভাগে সাজানো হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্বপালন করবে। প্রয়োজনে জেলা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, সৈকতের প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। সৈকতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য টিম থাকবে।
পর্যটকদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
তিনি বলেন, পুলিশ-র্যাবসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও টহলে থাকবে। ভ্রমণপিয়াসীদের নির্মল আনন্দ নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।