ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট অপারেশনাল ইন্সপেক্টর (এফওআই)। ৭৩ বছর বয়সী ফরিদুজ্জামানের নেই পাইলট লাইসেন্স। তা সত্ত্বেও তিনি বসেছিলেন পাইলটের আসনে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে নিয়ম ভাঙ্গলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো সিঙ্গাপুরে এয়ারবাসের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সক্ষমতা পরিদর্শনের জন্য তাকে সেখানে পাঠাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। পাইলটের আসনে বসার ওই ঘটনায় বেবিচকের পক্ষ থেকে তদন্ত করে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা চিঠিতে জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কিনছে। এই দুই এয়ারলাইনের কর্মীদের সিঙ্গাপুরে প্রশিক্ষণ দেবে এয়ারবাস। সিঙ্গাপুরে এয়ারবাসের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সক্ষমতা পরিদর্শনের জন্য ফ্লাইট অপারেশনাল ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামানকে মনোনীত করেছে বেবিচক। তার নাম প্রস্তাব করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। তবে লাইসেন্সবিহীন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামানকে বিদেশ যাবার অনুমতি দেয়নি বিমান মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রোকসিন্দা ফারহানার সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট জেদ্দা থেকে ঢাকা আসার পথে ভারতের সীমানা অতিক্রম করার সময় উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে একজন যাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই মুহূর্তে ফ্লাইট পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা বেবিচকের অপারেশন্স ইন্সপেক্টর বৈধ লাইসেন্সধারী না হয়েও পাইলটের আসনে বসেন—যা উড়োজাহাজের সুরক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ব্যত্যয়। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা—তা উল্লেখ ছাড়াই সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব যথা োযথ হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়। বেবিচকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও তদন্ত হয়েছে কিনা সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি স্থানীয় সময়ে জেদ্দা থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ৩৩৬ ফ্লাইটে পাইলট হিসেবে ক্যাপ্টেন ইরফানুল হকের ইনিশিয়াল রুট চেক (আইআরসি) ছিল। বিমানের একটি ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজে ফ্লাইটটি পরিচালিত হয়। ফ্লাইটে পাইলট ইন কমান্ড (পিআইসি) এবং ট্রেইনি এক্সামিনার ছিলেন ক্যাপ্টেন দিলদার আহমেদ (জি-৫২৪৫৯)। সেই ফ্লাইটে পর্যবেক্ষণের জন্য ছিলেন বেবিচকের মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামান। তবে ৭৩ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জামানের পাইলট লাইসেন্স নেই। ক্যাপ্টেন ইরফানুল হককে ককপিটে রেখে ক্রু রেস্ট বাংকে চলে যান দিলদার আহমেদ। সে সময়ে ককপিটে পাইলটের আসনে বসেন ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জাম
ান।
তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়। সেই ফ্লাইটে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এক যাত্রী। পরে ঢাকায় আসার পর তার মৃত্যু হয়। ফ্লাইটটি ছেড়ে আসার ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মাথায় অসুস্থবোধ করেন সৌদি প্রবাসী কবীর আহমেদ। সেই সময়ে ফ্লাইটের ফ্লাইট পার্সার জয়াসহ অন্যান্য কেবিন ক্রু তার প্রাথমিক চিকিৎসার প্রস্তুতি নেন। ফ্লাইট অপারেশনের নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটে কোনও চিকিৎসক আছেন কিনা জানতে ঘোষণাও করা হয়। সেই ফ্লাইটের আরেক যাত্রী শমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ডা. এবিএম হারুন। তিনি কেবিন ক্রুদের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রবাসী কবীর আহমেদের চিকিৎসায় সহায়তা করেন। কবির আহমেদের হার্ট ফেইলিওর হওয়ায় ডা. এবিএম হারুন তাকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিকটস্থ কোনও বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পরামর্শ দেন। ইনিশিয়াল রুট চেকে (আইআরসি) থাকা পাইলট ইরফানুল হক যাত্রীর হার্ট অ্যাটাকের খবর পেয়ে ক্রুদের প্রাথমিক চিকিৎসার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে ইরফানুল হক কাছাকাছি কোনও বিমানবন্দরে অবতরণ করতে প্রস্তাব করলেও ফরিদুজ্জামানের সম্মতি পাননি।
এ ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়ে ক্যাপ্টেন দিলদার আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিমান। নোটিশের জবাবে ক্যাপ্টেন দিলদার আহমেদও স্বীকার করেন তার অনুপস্থিতিতে ককপিটে পাইলটের আসনে বসেছিলেন ফরিদুজ্জামান।
এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদুজ্জামানের এয়ারবাসের উড়োজাহাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকায় তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিমানের ফ্লাইটে তার ককপিটে বসার ঘটনাটি বিমানের পক্ষ থেকে তদন্ত হচ্ছে। কোনও দোষ থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।