অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকাহত সহকর্মীরা

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকে ‘স্তব্ধ’ শোবিজ অঙ্গনের তারকারা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকালে এই অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর জানার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকবার্তা জানিয়েছেন সহশিল্পীরা।

এক স্ট্যাটাসে চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু লিখেছেন- চিত্রগ্রাহক আজিজ ভাই, কুস্তিগীর চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে পরিচয়। একদম কনকনে শীতের মধ্যে গ্রামে শুটিং করছি তখন। আমার সেদিনের শুটিং শেষ। পরিচয়ের প্রথম দিনেই আমি, আজিজ ভাই এবং আমার এক সহশিল্পী বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে জ্যোৎস্নার আলোয় কুয়াশা মাড়িয়ে গ্রামের রাত দেখব বলে। অজানা এক গ্রামে গিয়ে থামলাম।

খেয়াল করলাম আমার মতো বাকি দুজনও বেশ আন্তরিকভাবেই অপরিচিতদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন। ওই গ্রামের লোকজন জানেন না আমরা কে, শুধু জানেন ঢাকার মানুষ গ্রাম দেখতে এসেছে। সন্ধ্যা ৭-৯টা পুরো গ্রাম আমাদের আপন হয়ে গেল। তারপর বিদায় নিলাম সেখান থেকে।

এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমার অনেক, কিন্তু আজিজ ভাই বলেছিলেন- মিতু আমরা এভাবে আবার ঘুরব। আজ ভোরে সেই ভাই ঘুমের মধ্যেই পৃথিবী ছেড়েছেন। সেই দিনটা বারবার মাথায় ঘুরছে তখন থেকেই। একটু আগে শুনলাম, অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা করেছেন। তার সঙ্গে পরিচিত আমি। একই দিনে দুজন মানুষের পরলোক গমনের খবরে মানসিক এক যন্ত্রণা হচ্ছে। মৃত্যু পরম সত্য, যে সত্য মেনে নেওয়া কষ্টের। অনেক কষ্টের।

হিমুর মৃত্যুর খবরে অভিনেত্রী শানু লিখেছেন- অভিমানে আচমকা মৃত্যু যখন হলো সেই অভিমানের খবর রেখেছিল কি কেউ, বলো? শুধু মৃত্যুটাই তো এক জবর খবর হলো। রঙের নিষ্ঠুরতার কাছেই যেন আজ বিষাদ খুন হলো! কাছের মানুষের অভিমানের খোঁজ জানাটা, মনের যত্ন নেওয়ার সময় এসেছে সবার। এমন অভিমানী মৃত্যু কাম্য নয়, কখনো। হুমায়রা হিমু, অভিমানকে জিতিয়ে দিয়ে কি লাভ হলো? ভাষা নেই কিছু বলার। ভালো থেকো পরপারে।

হিমুর মৃত্যুর খবরে চমকে গেছেন অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। ফেসবুকে অভিনেত্রীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, হুমায়রা হিমু? এটা কি শুনলাম? অভিনেত্রী মনিরা মিঠু শোকবার্তা প্রকাশ করে লিখেছেন- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। হুমাইরা হিমু।

নির্মাতা চয়ানিকা চৌধুরী লিখেছেন- প্রিয় হিমু। যদিও তোমার সঙ্গে অনেক দিন কথা হয়নি, তা এক বছর হলো; কিন্তু কাজটা তুমি একদম ভালো করোনি। ভীষণ রাগ হচ্ছে। যত যাই হোক, জীবন একটাই আর জীবন সুন্দর। বেঁচে থাকাটা অনেক আনন্দের।

আফসোস করে চয়নিকা লিখেছেন- আসলেই তুমি একটা অন্যায় কাজ করেছ নিজের ওপর। একা একা চলে গেলে? নিজে নিজেই? তোমার আশপাশের মানুষ একদম ভালো ছিল না। তোমাকে বকাও দিয়েছিলাম। আজ মনে হচ্ছে, বকাটা কন্টিনিউ করতাম যদি!

চিত্রনায়িকা শান্তা পাল লিখেছেন- লাস্ট শোতে হিমু আপু বলেছিলেন- আম্মু মারা যাওয়ার পর উনি অনেক ডিপ্রেশনের শিকার হন। হিমু আপুর অনেক হ্যালোসিনেশন কাজ করত। ডিপ্রেশন অনেক মারাত্মক একটা জিনিস, কিন্তু তারপরও মৃত্যু কাম্য নয়।

অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী লিখেছেন- ওপারে ভালো থেকো। কিছু বলার ভাষা নেই। অভিনেতা সিদ্দিক লিখেছেন- অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম।

আহসান হাবিব নাসিম বলেন, আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় হিমুকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন- শুনেছি, একজন যুবক হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সেই যুবক তার মোবাইলসহ পালিয়ে গেছেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু মারা গেছেন বলে শুনেছি। খবরটি জানার পর উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। কিভাবে তিনি মারা গেছেন, বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় হুমাইরা হিমুর জন্ম। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্য দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন।

২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হুমায়রা হিমুর অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রের গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.